ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্যাস সংকট মোকাবেলা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ অনেক সময়ই পাইপলাইনে পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ থাকে না। গ্যাসের অভাবে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়, প্রতিষ্ঠানকে লোকসান গুনতে হয়।

বাসাবাড়িতেও ঠিকমতো চুলা জ্বলে না। অন্যদিকে আমাদের গ্যাসের মজুদও ক্রমেই কমে আসছে। এ অবস্থায় নতুন করে বাসাবাড়িতে পাইপলাইনে গ্যাসের সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু মানুষকে তো রান্না করে খেতে হবে! শহরের বহুতল ভবনে লাকড়ি দিয়ে রান্না করাও যে অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র বিকল্প হচ্ছে সিলিন্ডারে এলপি গ্যাস। কিন্তু মানুষ এই গ্যাস ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে না। তার বড় কারণ, পাইপলাইনের তুলনায় এলপি গ্যাসের অত্যধিক দাম। কারখানাগুলোও এলপি গ্যাস ব্যবহার করে না। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। সরকারের নীতিনির্ধারকদের গ্যাসের এই সংকট থেকে উত্তরণের একটি পথ খুঁজে বের করতেই হবে। শনিবার আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এমন দাবিই করেছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁরা এলপি গ্যাস আরো সহজলভ্য, সুলভ ও নিরাপদ করার ওপর জোর দিয়েছেন।

আমাদের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তায় আরো অনেক কারণেই এলপি গ্যাসের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। শহরের কয়েক শতাংশ মানুষ জ্বালানি হিসেবে গ্যাস পাবে, দেশের  বেশির ভাগ মানুষ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবে—এটা ন্যায়সংগতও নয়। সেটি পাইপলাইন দিয়েও করা সম্ভব নয়। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের আরো ভয়ংকর দিক রয়েছে। বাংলাদেশ উচ্চ মাত্রায় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা একটি দেশ। যদি কখনো ঢাকায় বা পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ আছে এমন বড় কোনো শহরে উচ্চ মাত্রায় ভূমিকম্প হয়, তাহলে গ্যাস পাইপ ফেটে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্যাস ছড়িয়ে পড়বে এবং শহরজুড়ে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হবে। ভবনধসে যত না মানুষ মারা যাবে, অগ্নিকাণ্ডে তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তদুপরি বর্তমানে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ থাকায় গ্যাসের যে অপচয় হচ্ছে, যে পরিমাণ চুরি ও অনিয়ম হচ্ছে, তা-ও কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই রাষ্ট্রীয় সম্পদের সর্বোত্তম ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে জাতি হিসেবে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। সব বিবেচনায় এলপি গ্যাসই হচ্ছে সর্বোত্তম বিকল্প। কিন্তু তা ব্যবহারকারীদের কাছে সহজলভ্য করতে হবে এবং এর দাম তাদের সাধ্যের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। প্রণোদনা দিয়ে কিংবা প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে সরকারকে এ কাজটি এখনই করতে হবে।

এলপি গ্যাস ব্যবহার নিরাপদ করাও জরুরি। নিকট অতীতে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, সিলিন্ডার খালি হওয়ার পর কোথাও কোথাও অবৈধভাবে সিলিন্ডার রিফিল করা হয়। তাতে সিলিন্ডারে গ্যাসের ওজন যেমন কম হয়, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এ ধরনের অপতৎপরতা রোধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করি, গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

গ্যাস সংকট মোকাবেলা

আপডেট টাইম : ১২:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ অনেক সময়ই পাইপলাইনে পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ থাকে না। গ্যাসের অভাবে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়, প্রতিষ্ঠানকে লোকসান গুনতে হয়।

বাসাবাড়িতেও ঠিকমতো চুলা জ্বলে না। অন্যদিকে আমাদের গ্যাসের মজুদও ক্রমেই কমে আসছে। এ অবস্থায় নতুন করে বাসাবাড়িতে পাইপলাইনে গ্যাসের সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু মানুষকে তো রান্না করে খেতে হবে! শহরের বহুতল ভবনে লাকড়ি দিয়ে রান্না করাও যে অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র বিকল্প হচ্ছে সিলিন্ডারে এলপি গ্যাস। কিন্তু মানুষ এই গ্যাস ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে না। তার বড় কারণ, পাইপলাইনের তুলনায় এলপি গ্যাসের অত্যধিক দাম। কারখানাগুলোও এলপি গ্যাস ব্যবহার করে না। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। সরকারের নীতিনির্ধারকদের গ্যাসের এই সংকট থেকে উত্তরণের একটি পথ খুঁজে বের করতেই হবে। শনিবার আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এমন দাবিই করেছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁরা এলপি গ্যাস আরো সহজলভ্য, সুলভ ও নিরাপদ করার ওপর জোর দিয়েছেন।

আমাদের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তায় আরো অনেক কারণেই এলপি গ্যাসের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। শহরের কয়েক শতাংশ মানুষ জ্বালানি হিসেবে গ্যাস পাবে, দেশের  বেশির ভাগ মানুষ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবে—এটা ন্যায়সংগতও নয়। সেটি পাইপলাইন দিয়েও করা সম্ভব নয়। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের আরো ভয়ংকর দিক রয়েছে। বাংলাদেশ উচ্চ মাত্রায় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা একটি দেশ। যদি কখনো ঢাকায় বা পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ আছে এমন বড় কোনো শহরে উচ্চ মাত্রায় ভূমিকম্প হয়, তাহলে গ্যাস পাইপ ফেটে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্যাস ছড়িয়ে পড়বে এবং শহরজুড়ে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হবে। ভবনধসে যত না মানুষ মারা যাবে, অগ্নিকাণ্ডে তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তদুপরি বর্তমানে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ থাকায় গ্যাসের যে অপচয় হচ্ছে, যে পরিমাণ চুরি ও অনিয়ম হচ্ছে, তা-ও কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই রাষ্ট্রীয় সম্পদের সর্বোত্তম ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে জাতি হিসেবে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। সব বিবেচনায় এলপি গ্যাসই হচ্ছে সর্বোত্তম বিকল্প। কিন্তু তা ব্যবহারকারীদের কাছে সহজলভ্য করতে হবে এবং এর দাম তাদের সাধ্যের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। প্রণোদনা দিয়ে কিংবা প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে সরকারকে এ কাজটি এখনই করতে হবে।

এলপি গ্যাস ব্যবহার নিরাপদ করাও জরুরি। নিকট অতীতে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, সিলিন্ডার খালি হওয়ার পর কোথাও কোথাও অবৈধভাবে সিলিন্ডার রিফিল করা হয়। তাতে সিলিন্ডারে গ্যাসের ওজন যেমন কম হয়, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এ ধরনের অপতৎপরতা রোধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করি, গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।