বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সরকারের তথা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন রাষ্ট্রদূতরা। তাঁদের কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তৈরি হয়, বিকশিত হয়।
সুষ্ঠুভাবে কর্মসম্পাদনের জন্য সময়ে সময়ে তাঁরা সরকারের ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ পান। তবে সম্মিলিতভাবে সব রাষ্ট্রদূত একসঙ্গে বসে আলোচনার সুযোগ পেতেন না। ফলে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের বিষয়টি এত দিন বিক্ষিপ্ত ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বিত আলোচনার একটি ব্যবস্থা এবার করেছে। তাদের উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রদূত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫৮টি দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতরা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
‘জনগণ ও শান্তির জন্য কূটনীতি’ শীর্ষক তিন দিনের এই সম্মেলন শেষ হয়েছে গতকাল। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা কূটনীতি বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তাঁরা রাষ্ট্রদূতদের দিকনির্দেশনা দেন।
সরকারের উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে তাঁদের দিকনির্দেশনা দেন। এ ধরনের একটি সম্মেলন কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য জরুরি ছিল। অভিজ্ঞতা বিনিময় ও কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য এটি একটি আবশ্যক ফোরাম। দেরি হলেও সেটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকার প্রশংসার দাবিদার। সম্মেলনে ভিশন ২০২১, পররাষ্ট্রনীতির চ্যালেঞ্জ, এসডিজি বাস্তবায়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ব্লু ইকোনমি ও যোগাযোগ, অভিবাসন ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, রোহিঙ্গা সংকট, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়া, প্রটোকল ও কনস্যুলার সেবা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দূতরা কী ধরনের চ্যালেঞ্জ ও চাপের সম্মুখীন হন সেসব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মিশনগুলোর ভূমিকা নিয়েও কথা হয়েছে। বিষয়গুলোর সার্বিক পর্যালোচনার মাধ্যমে কূটনীতিবিষয়ক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন সহজতর হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কথার সূত্রে বলা যায়, অন্য একটি দেশে ‘বাংলাদেশ’ বলতে সেখানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকেই বোঝায়। কারণ সে দেশে তিনিই সরকার ও জনগণের প্রতিনিধি। সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের মানুষের অভিভাবক তিনি। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার কাজের অনেকটাই তাঁর মাধ্যমে হয়। প্রবাসীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে খেয়াল রাখতে হয়, তারা বিপদে পড়লে সহায়তা জোগানোর দায়িত্বও তাঁর। দেশের ব্যাপারে নেতিবাচক প্রচারণা রোধের ব্যবস্থা করার কাজও তাঁকে করতে হয়।
আশা করা যায়, এ সম্মেলনের পর রাষ্ট্রদূতরা বিদেশে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় আরো তৎপর হবেন। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র ও উৎস খুঁজে বের করবেন। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া যায় না বলে প্রবাসী শ্রমিকদের যে অভিযোগ, তা যাতে আর উত্থাপিত না হয় সেদিকে নজর দেবেন। কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র সন্ধান করবেন। বিরোধমূলক ইস্যুর ক্ষেত্রে বন্ধুত্বের নীতি বজায় রেখে সমাধানের পথ খুঁজবেন। অন্যদিকে সরকারের দায়িত্ব হলো বৈদেশিক মিশনে নিয়োজিতরা যাতে স্বচ্ছন্দে-সহজে জীবনযাপন করতে পারে সে ব্যবস্থা করা। এ সম্মেলন নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হোক। দক্ষ ও সাবলীল কূটনৈতিক তৎপরতার জন্য এমন ফোরাম জরুরি।