প্রথমবারের মতো ছেলেকে নিয়ে মুখ খুললেন লাদেনের মা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নিহত আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মা আলিয়া ঘানেম কোন সংবাদপত্রকে দেয়া তার প্রথম সাক্ষাতকারে বলেছেন, ওসামা ছিলেন একজন ভালো ছেলে। সে যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময় মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়ে উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হয়েছিলেন।

ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে আলিয়া ঘানেম বলেন, সৌদি আরবের জেদ্দায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এক ‘কাল্ট’ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর পাল্লায় পড়ে পুরোপুরি বদলেযান ওসামা। তিনি ওই গ্রুপটি থেকে দূরে থাকার জন্য তার ছেলেকে বারবার সাবধান করেছিলেন।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে চারটি ছিনতাই করা বিমান দিয়ে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার এবং ওয়াশিংটনে পেন্টাগন ভবনে হামলা করা হয়। এতে দুই হাজারের বেশি লোক নিহত হয়, আর তার আদেশ ওসামা বিন লাদেনই দিয়েছিলেন বলে দাবি করছে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার ১০ বছর পর ২০১১ সালের ২ মে রাতে পাকিস্তানের আ্যবোটাবাদ শহরে মার্কিন কমান্ডোদের হামলায় নিহত হন তিনি।

গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিন লাদেনের মা বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই লোকেরাই তাকে বদলে দেয়, সে একেবারে অন্যরকম মানুষ হয়ে যায়।’

‘আপনি বলতে পারেন এটা ছিল একটা কাল্ট- আমি তাকে সবসময়ই বলতাম ওদের থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু সে কখনো স্বীকার করেনি সে কি করছে, কারণ আমাকে সে খুবই ভালোবাসতো।’

ঘানেম বলেন, ‘ওসামা স্কুলে ভালো ছাত্র ছিল, পড়াশোনা ভালোবাসতো। সে তারসব টাকাপয়সা আফগানিস্তানের পেছনে খরচ করেছে। পারিবারিক ব্যবসার ছুতো করে সে সন্তর্পণে কোথায় কোথায় চলে যেতো।’ “

লাদেন জিহাদি হয়ে উঠতে পারেন কখনো কী এমনটা সন্দেহ করেছিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার মনে কখনো এমন ভাবনা আসেনি।’

জিহাদি হওয়ার বিষয়টি জানার  পর কেমন লেগেছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা খুব ভেঙে পড়েছিলাম, এমনটা হোক আমি চাই নি। কেন সে এভাবে সবকিছু ত্যাগ করতে যাবে?’

বিন লাদেন পরিবার বলছে, তারা ওসামাকে সর্বশেষ দেখেছেন ১৯৯৯ সালে, আফগানিস্তানে। কান্দাহার শহরের বাইরে তাদের ঘাঁটিতে দুবার তারা দেখা করতে গিয়েছিলেন। ‘জায়গাটা ছিল বিমানবন্দরের কাছে, যা তারা রুশদের হাত থেকে দখল করেছিল।’

ঘানেম বলছিলেন, ‘আমাদের পেয়ে সে খুব খুশি হয়েছিল, আমাদের প্রতিদিন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখাতো। একটা পশু জবাই করে একটা ভোজ দেয়া হলো। তাতে সবাইকে দাওয়াত দেয়া হলো।’

সাক্ষাতকারের সময় উপস্থিত ওসামার ভাই হাসান বলেন, ‘প্রথম দিকে তার সঙ্গে যারই দেখা হয়েছে সেই তাকে সম্মান করেছে। শুরুর দিকে আমরাও তাকে নিয়ে গর্বিত ছিলাম। এমনকি সৌদি সরকারও তাকে সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখতো। তারপরই সে হয়ে উঠলো মুজাহিদ ওসামা।’

ওসামা বিন লাদেনের বাবা ইয়েমেনি হলেও তার মা আলিয়া ঘানেমের জন্ম এক সিরিয়ান আলাওয়াইট শিয়া পরিবারে।

তিনি সৌদি আরবে আসেন ১৯৫০এর দশকের মাঝামাঝি, আর ওসামার জন্ম ১৯৫৭ সালে। তিন বছর পর ওসামার বাবাকে তালাক দেন তিনি, বিয়ে করেন আল-আত্তাসকে, যিনি বিন-লাদেনদের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যেরই একজন প্রশাসক ছিলেন।

ওসামার বাবা কমপক্ষে ১১জন স্ত্রীর গর্ভে ৫৪টি পুত্রকন্যার জন্ম দেন।

ওসামার আরেক ভাই আহমদ গার্ডিয়ানকে বলেন, নাইন-ইলেভেনের ১৭ বছর পরও তাদের মা ওই ঘটনার জন্য ওসামাকে দোষ দিতে চান না। তিনি দোষ দেন তার চারপাশের লোকদেরকে।

আহমদ বলছিলেন, তাদের মা শুধু ওসামাকে ‘ভালো ছেলে’ হিসেবেই জানেন, জিহাদি ওসামাকে তার কখনো জানা হয় নি।

পাকিস্তানের এ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন রাদেন যখন মার্কিন বিশেষ বাহিনীর হাতে নিহত হন–তখন তার যে স্ত্রী-সন্তানরা ছিলেন–তারা এখন জেদ্দায় থাকেন। তাদের শহরের মধ্যে চলাফেরার অধিকার আছে তবে দেশের বাইরে যাবার অনুমতি নেই।

আলিয়া ঘানেম বলছেন, ‘আমি ওসামার হারেমের সাথে প্রায় সপ্তাহেই কথা বলি। তারা কাছেই থাকে।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর