ঢাকা , বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টিসিবির পণ্য বিক্রি ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে

কোন ব্যবসায়ী প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জনের সুযোগ না থাকলে ব্যবসায় করবেন না, এটিই প্রচলিত বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য। এই অর্থনীতিতে ব্যবসায়ী শতকরা কত ভাগ মুনাফা করতে পারেন তার কোন সীমারেখা বেঁধে দেওয়া নেই। এই জায়গায় ব্যবসায়ী সর্বেসর্বা। পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কীভাবে দাম বাড়ানো যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ী অর্থনীতিতে রীতিমত নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার সামর্থ রাখেন। এই ব্যবসায়ীরা কৃষকের হাতে ধান থাকলে প্রতি মণের দাম নির্ধারণ করেন ৫ শ’ টাকা। আবার যখন এই ধানই তারা বিক্রি করেন তখন সেটি হয়ে যায় ১ হাজার টাকা। অর্থাৎ উৎপদক শ্রেণি এইসব মধ্যসত্বভোগী ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি অবস্থায় থাকছেন। এত লম্বা ভনিতা টানার উদ্দেশ্য হলো জেলা শহরে টিসিবির কোন ডিলার না থাকা প্রসঙ্গে একটি খবর যা গতকালের দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত হয়েছে। ওই সংবাদের তথ্য থেকে জানা যায়, ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয়ের সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তালিকাভুক্ত ২০জন ডিলার আছেন সুনামগঞ্জ জেলায়। এবার রমজানে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে এইসব ডিলারের অনুকূলে বর্ধিত পরিমাণে চিনি, ডাল ও ভোজ্যতৈল বরাদ্দ দেয়া হয়। বিভিন্ন পণ্য মিলিয়ে মোট ১৮০০ কেজি বিক্রি করতে পারবেন একজন ডিলার। কিন্তু বরাদ্দকৃত ২০ ডিলারের মধ্যে মাত্র ৭জন মালামালের সরবরাহ গ্রহণ করেছেন। রবিবার বিকাল পর্যন্ত অবশিষ্ট ১৩ ডিলার টিসিবি থেকে কোন জিনিস গ্রহণ করেন নি। কেন বরাদ্দকৃত দ্রব্য গ্রহণ করেন নি এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ীদের সাফ জবাব ছিলো, এত কম জিনিস সিলেটের ওসমানিনগরে অবস্থিত টিসিবি’র গোডাউন থেকে এনে বিক্রি করলে যে পরিমাণ পরিবহন খরচ হয় তাতে লাভের বদলে লোকসান গুণতে হবে তাদেরকে। সুতরাং লোকসানকে সম্ভাবনায় রেখে কে ব্যবসা করতে চাইবেন, এ তো সহজ ও নির্ভেজাল সত্য। কোন ডিলার পণ্য গ্রহণ না করলে তার ডিলারশীপ বাতিল হয়ত হবে কিন্তু নতুন ডিলার যে একই ব্যবস্থায় পণ্য বিক্রয় করতে রাজি হবেন তার কোন নিশ্চয়তা মিলে না। সুতরাং টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সরকারকে নতুনভাবে ভাবতে হবে।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলে প্রতি জেলায় টিসিবির একটি করে বিক্রয়কেন্দ্র ছিল। তবে ওইসব বিক্রয়কেন্দ্রে কর্মরত কর্মচারীদের সীমাহীন লোভের কারণে একসময় সরকার জেলায় জেলায় টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেন। এখন ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে টিসিবি মাঝেমধ্যে কিছু পণ্য বাজারে সরবরাহের ব্যবস্থা করে থাকে যা বিশাল সমুদ্রে একবিন্দু বৃষ্টির ফোঁটার মতোই অকিঞ্চিৎকর। তার তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা এতোটাই জটিল যে সুনামগঞ্জের একজন ডিলারকে সিলেটের ওসমানীনগর থেকে মালামাল আনতে হবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। এই যে লাভের গুড় পিঁপড়ার মুখে দিয়ে দেওয়া সেটি আসলে আমলাতান্ত্রিক আয়েশিপনার নজির মাত্র। সরবরাহ ব্যবস্থাটি টিসিবি নিজের হাতে রাখতে পারত না? এখন তো নানা কোম্পানি একেবারে গ্রামের বাজারটি পর্যন্ত নিজেদের পণ্য পৌঁছে দিয়ে থাকে। টিসিবি যদি নিজেরা পণ্য এনে ডিলারদের কাছে পৌঁছে দিত তাহলে ডিলারদের কোন অজুহাত ধুপে টিকত না। কিন্তু বাজার অর্থনীতির চাপের কারণে টিসিবি এমন ব্যবস্থাপনার দিকে যেতে পারবে না বা ও পথে তাদেরকে যেতে দেওয়া হবে না। সুতরাং টিসিবির কম দামে তেল চিনি ডাল খাওয়ার আশা ছাড়তেই হবে নাদান পাবলিককে।
গত ওয়ান ইলিভেন সরকারের শাসনামলে বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয়ে উদাহরণ তৈরি করেছিল। টিসিবি কি তাদের পণ্য বিজিবির মাধ্যমে উপজেলায় উপজেলায় বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারেন না?

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

টিসিবির পণ্য বিক্রি ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে

আপডেট টাইম : ০৫:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০১৭

কোন ব্যবসায়ী প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জনের সুযোগ না থাকলে ব্যবসায় করবেন না, এটিই প্রচলিত বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য। এই অর্থনীতিতে ব্যবসায়ী শতকরা কত ভাগ মুনাফা করতে পারেন তার কোন সীমারেখা বেঁধে দেওয়া নেই। এই জায়গায় ব্যবসায়ী সর্বেসর্বা। পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কীভাবে দাম বাড়ানো যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ী অর্থনীতিতে রীতিমত নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার সামর্থ রাখেন। এই ব্যবসায়ীরা কৃষকের হাতে ধান থাকলে প্রতি মণের দাম নির্ধারণ করেন ৫ শ’ টাকা। আবার যখন এই ধানই তারা বিক্রি করেন তখন সেটি হয়ে যায় ১ হাজার টাকা। অর্থাৎ উৎপদক শ্রেণি এইসব মধ্যসত্বভোগী ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি অবস্থায় থাকছেন। এত লম্বা ভনিতা টানার উদ্দেশ্য হলো জেলা শহরে টিসিবির কোন ডিলার না থাকা প্রসঙ্গে একটি খবর যা গতকালের দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত হয়েছে। ওই সংবাদের তথ্য থেকে জানা যায়, ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয়ের সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তালিকাভুক্ত ২০জন ডিলার আছেন সুনামগঞ্জ জেলায়। এবার রমজানে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে এইসব ডিলারের অনুকূলে বর্ধিত পরিমাণে চিনি, ডাল ও ভোজ্যতৈল বরাদ্দ দেয়া হয়। বিভিন্ন পণ্য মিলিয়ে মোট ১৮০০ কেজি বিক্রি করতে পারবেন একজন ডিলার। কিন্তু বরাদ্দকৃত ২০ ডিলারের মধ্যে মাত্র ৭জন মালামালের সরবরাহ গ্রহণ করেছেন। রবিবার বিকাল পর্যন্ত অবশিষ্ট ১৩ ডিলার টিসিবি থেকে কোন জিনিস গ্রহণ করেন নি। কেন বরাদ্দকৃত দ্রব্য গ্রহণ করেন নি এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ীদের সাফ জবাব ছিলো, এত কম জিনিস সিলেটের ওসমানিনগরে অবস্থিত টিসিবি’র গোডাউন থেকে এনে বিক্রি করলে যে পরিমাণ পরিবহন খরচ হয় তাতে লাভের বদলে লোকসান গুণতে হবে তাদেরকে। সুতরাং লোকসানকে সম্ভাবনায় রেখে কে ব্যবসা করতে চাইবেন, এ তো সহজ ও নির্ভেজাল সত্য। কোন ডিলার পণ্য গ্রহণ না করলে তার ডিলারশীপ বাতিল হয়ত হবে কিন্তু নতুন ডিলার যে একই ব্যবস্থায় পণ্য বিক্রয় করতে রাজি হবেন তার কোন নিশ্চয়তা মিলে না। সুতরাং টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সরকারকে নতুনভাবে ভাবতে হবে।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলে প্রতি জেলায় টিসিবির একটি করে বিক্রয়কেন্দ্র ছিল। তবে ওইসব বিক্রয়কেন্দ্রে কর্মরত কর্মচারীদের সীমাহীন লোভের কারণে একসময় সরকার জেলায় জেলায় টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেন। এখন ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে টিসিবি মাঝেমধ্যে কিছু পণ্য বাজারে সরবরাহের ব্যবস্থা করে থাকে যা বিশাল সমুদ্রে একবিন্দু বৃষ্টির ফোঁটার মতোই অকিঞ্চিৎকর। তার তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা এতোটাই জটিল যে সুনামগঞ্জের একজন ডিলারকে সিলেটের ওসমানীনগর থেকে মালামাল আনতে হবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। এই যে লাভের গুড় পিঁপড়ার মুখে দিয়ে দেওয়া সেটি আসলে আমলাতান্ত্রিক আয়েশিপনার নজির মাত্র। সরবরাহ ব্যবস্থাটি টিসিবি নিজের হাতে রাখতে পারত না? এখন তো নানা কোম্পানি একেবারে গ্রামের বাজারটি পর্যন্ত নিজেদের পণ্য পৌঁছে দিয়ে থাকে। টিসিবি যদি নিজেরা পণ্য এনে ডিলারদের কাছে পৌঁছে দিত তাহলে ডিলারদের কোন অজুহাত ধুপে টিকত না। কিন্তু বাজার অর্থনীতির চাপের কারণে টিসিবি এমন ব্যবস্থাপনার দিকে যেতে পারবে না বা ও পথে তাদেরকে যেতে দেওয়া হবে না। সুতরাং টিসিবির কম দামে তেল চিনি ডাল খাওয়ার আশা ছাড়তেই হবে নাদান পাবলিককে।
গত ওয়ান ইলিভেন সরকারের শাসনামলে বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয়ে উদাহরণ তৈরি করেছিল। টিসিবি কি তাদের পণ্য বিজিবির মাধ্যমে উপজেলায় উপজেলায় বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারেন না?