ঢাকা , বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রাণস্পন্দনে অবদান রাখুন

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আজ ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে কোটি কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন, পর্দার আড়ালে থাকা সেসব মানুষসহ সাধারণ মানুষ যারা রক্তদানে ভয় পান তাদের ভয় দূর করে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘Give blood and keep the world beating’, অর্থাৎ রক্ত দাও এবং পৃথিবীকে স্পন্দিত করো। এ দিবস পালনের আরও উদ্দেশ্য জনগণকে প্রাণঘাতী রক্তবাহিত রোগ- হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইসিস সি, এইডস্, সিফিলিস ও ম্যালেরিয়া থেকে নিরাপদ থাকার জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং রক্তের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।

প্রতিবছর বিশ্বে আট কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান করা হয়, অথচ এর মাত্র ৩৮ শতাংশ সংগৃহীত হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে, যেখানে বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ মানুষ। এখনো বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের প্রয়োজন হলে নির্ভর করতে হয় নিজের পরিবারের সদস্য বা নিজের বন্ধুদের রক্তদানের ওপর। অনেক দেশে পেশাদার রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে রক্তদান করে আসছে। অথচ বিশ্বের নানা দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়, নিরাপদ রক্ত সরবরাহের মূল ভিত্তি হলো স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দান করা রক্ত। কারণ তাদের রক্ত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং এসব রক্তের মধ্য দিয়ে গ্রহীতার মধ্যে জীবনসংশয়ী সংক্রমণ যেমন-এইডস, হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি এবং অন্যান্য রক্তবাহিত সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালন করা হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। তবে আমাদের দেশে স্বেচ্ছা-রক্তদাতার হার মাত্র ৩১ শতাংশ। দেশে বছরে প্রায় ১৪ লাখ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ যদি বছরে অন্তত দুবার রক্তদান করেন, তাহলেই এ ঘাটতি পুরণ হতে পারে। অথচ দুঃখজনক, আমাদের রক্তদাতার সংখ্যা খুব কম।

রক্ত মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পূর্ণ মাত্রায় রক্ত থাকলে মানবদেহ থাকে সজীব ও সক্রিয়। আর রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া দেখা দিলে শরীর অকেজো ও দুর্বল হয়ে প্রাণশক্তিতে ভাটা পড়ে। বিজ্ঞানীদের যথাসাধ্য চেষ্টা সত্ত্বেও এখনো রক্তের বিকল্প তৈরি করা সম্ভব হয়নি, নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব হবে এমনটাও আসা করা যায় না। মানুষের রক্তের প্রয়োজনে মানুষকেই রক্ত দিতে হয়। জীবন বাঁচানোর জন্য রক্তদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৮ থেকে ৬০ বছরের যে কোনো সুস্থ ব্যক্তি, যাদের শরীরের ওজন ৪৫ কেজির উপরে, তারা প্রতি চার মাস অন্তর রক্তদান করতে পারেন। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫০ থেকে ৪৫০ মিলিলিটার রক্তদান করা হয়, যা শরীরে থাকা মোট রক্তের ১০ ভাগের ১ ভাগ। রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দুসপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে। আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি চার মাস পরপর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না; বরং শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণচাঞ্চল্য আরও বেড়ে যায়। তাই আসুন, আমরা প্রত্যেকে হয়ে উঠি একেকজন রক্তযোদ্ধা এবং রক্ত দিয়ে মানুষের প্রাণস্পন্দনে অবদান রাখি।

সুব্রত বিশ্বাস শুভ্র : কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ; সমন্বয়ক, মিডিয়া সেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

প্রাণস্পন্দনে অবদান রাখুন

আপডেট টাইম : ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুন ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আজ ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে কোটি কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন, পর্দার আড়ালে থাকা সেসব মানুষসহ সাধারণ মানুষ যারা রক্তদানে ভয় পান তাদের ভয় দূর করে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘Give blood and keep the world beating’, অর্থাৎ রক্ত দাও এবং পৃথিবীকে স্পন্দিত করো। এ দিবস পালনের আরও উদ্দেশ্য জনগণকে প্রাণঘাতী রক্তবাহিত রোগ- হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইসিস সি, এইডস্, সিফিলিস ও ম্যালেরিয়া থেকে নিরাপদ থাকার জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং রক্তের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।

প্রতিবছর বিশ্বে আট কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান করা হয়, অথচ এর মাত্র ৩৮ শতাংশ সংগৃহীত হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে, যেখানে বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ মানুষ। এখনো বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের প্রয়োজন হলে নির্ভর করতে হয় নিজের পরিবারের সদস্য বা নিজের বন্ধুদের রক্তদানের ওপর। অনেক দেশে পেশাদার রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে রক্তদান করে আসছে। অথচ বিশ্বের নানা দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়, নিরাপদ রক্ত সরবরাহের মূল ভিত্তি হলো স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দান করা রক্ত। কারণ তাদের রক্ত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং এসব রক্তের মধ্য দিয়ে গ্রহীতার মধ্যে জীবনসংশয়ী সংক্রমণ যেমন-এইডস, হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি এবং অন্যান্য রক্তবাহিত সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালন করা হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। তবে আমাদের দেশে স্বেচ্ছা-রক্তদাতার হার মাত্র ৩১ শতাংশ। দেশে বছরে প্রায় ১৪ লাখ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ যদি বছরে অন্তত দুবার রক্তদান করেন, তাহলেই এ ঘাটতি পুরণ হতে পারে। অথচ দুঃখজনক, আমাদের রক্তদাতার সংখ্যা খুব কম।

রক্ত মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পূর্ণ মাত্রায় রক্ত থাকলে মানবদেহ থাকে সজীব ও সক্রিয়। আর রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া দেখা দিলে শরীর অকেজো ও দুর্বল হয়ে প্রাণশক্তিতে ভাটা পড়ে। বিজ্ঞানীদের যথাসাধ্য চেষ্টা সত্ত্বেও এখনো রক্তের বিকল্প তৈরি করা সম্ভব হয়নি, নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব হবে এমনটাও আসা করা যায় না। মানুষের রক্তের প্রয়োজনে মানুষকেই রক্ত দিতে হয়। জীবন বাঁচানোর জন্য রক্তদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৮ থেকে ৬০ বছরের যে কোনো সুস্থ ব্যক্তি, যাদের শরীরের ওজন ৪৫ কেজির উপরে, তারা প্রতি চার মাস অন্তর রক্তদান করতে পারেন। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫০ থেকে ৪৫০ মিলিলিটার রক্তদান করা হয়, যা শরীরে থাকা মোট রক্তের ১০ ভাগের ১ ভাগ। রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দুসপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে। আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি চার মাস পরপর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না; বরং শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণচাঞ্চল্য আরও বেড়ে যায়। তাই আসুন, আমরা প্রত্যেকে হয়ে উঠি একেকজন রক্তযোদ্ধা এবং রক্ত দিয়ে মানুষের প্রাণস্পন্দনে অবদান রাখি।

সুব্রত বিশ্বাস শুভ্র : কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ; সমন্বয়ক, মিডিয়া সেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়