ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১০ বিলিয়ন ডলার টার্গেট

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আইসিটি খাতে রফতানি আয় ২০২৩ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। উপযুক্ত উদ্যোগ-পদক্ষেপ নেয়া হলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন যে অসম্ভব নয়, সে ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের অনেকেই অবশ্য এতে সন্তুষ্ট থাকতে রাজি নন। তারা মনে করেন,  পরিকল্পিত ও সমন্বিত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই লক্ষ্যমাত্রা ১০ বিলিয়ন ডলারে নির্ধারণ ও অর্জন করা সম্ভব। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ-২০২০ বাংলাদেশের উদ্বোধনকালে যথার্থই বলেছেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল পেতে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন পূর্বশর্ত। প্রসঙ্গত তিনি বলেছেন, তথ্য প্রযুুক্তি ও স্টার্টআপে সহায়তা দিতে সরকার বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এবং প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে ন্যাশনাল স্কিল ডেভলপমেন্ট অথোরিটি কাজ করছে। তিনি এও উল্লখ করেছেন, জ্বালানি, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিগত ১১ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ওয়াকিবহাল মহল অবগত আছে, আমাদের দেশে দক্ষ মানবসম্পদের অভাব আছে এবং মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা, উদ্যোগ এবং পৃষ্ঠপোষকতারও অভাব রয়েছে। একারণেই মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বিভিন্ন মহল থেকে উচ্চারিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার তাকিদ দিয়েছেন বিভিন্ন উপলক্ষে। মন্ত্রীদের অনেকে দক্ষ মানবসম্পদের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। কিছুদিন আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার ফাইভজি মোবাইল ফোন সেবা চালুর উদ্যোগ প্রসঙ্গে বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল চয়নে ফাইভজি হলো একটি মহাসড়ক। ক’দিন আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবেশবাদীদের এক আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল পেতে হলে প্রয়োজন মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা। এটা হতে হবে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা, যাতে শিক্ষার্থী গবেষকের মতো চিন্তা করার, পাঠ করার ও লেখার দক্ষতা অর্জন করতে পারে। শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক গুণীজনসংবধনায়ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার তাকিদ দিয়ে বলা হয়েছে, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারলে দেশ বহুগুণে এগিয়ে যাবে।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের দক্ষ মানবসম্পদের অভাব আছে। জনসংখ্যা কম থাকার কারণে যে, এই অভাব, তা নয়। কার্যত, বাংলাদেশ অতিরিক্ত জনসংখ্যার একটি দেশ। কিন্তু এই জনশক্তিকে সম্পদে রূপান্তর করার উদ্যোগ ও ব্যবস্থার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, তা কারিগরি ও কর্মমুখী নয়। ফলে কারিগরি কর্মযোগ্যতা ছাড়াই শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত হচ্ছে এবং বেকার থাকতে বাধ্য হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের কর্মসংস্থানের সুযোগ অত্যন্ত কম এবং প্রযুক্তির ব্যবহার-প্রসারে সেই সুযোগও ক্রমশ কমছে। কাজেই। বিপুল সংখ্যক বেকারের কর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও কর্মমুখী শিক্ষা অপরিহার্য। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি কর্মী কাজ করছে। তাদের বেশির ভাগ অদক্ষ বা আধদক্ষ। এ জন্য তাদের বেতনভাতাও তুলনামূলকভাবে কম। তারা যদি সবাই দক্ষ হতো, তাহলে বর্তমান অপেক্ষা আরো কয়েকগুণ বেশি রেমিট্যান্স আসতো এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরো সবল হতো। দেশের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি বিদ্যমান। এ জন্যে বিপুল সংখ্যাক বিদেশী বিশেষত ভারতীয় কর্মী কাজ করছে। তাদের প্রকৃত সংখ্যা কত, তার হিসাব নেই। ডয়সে ভেলের প্রতিবেদনে অবৈধ ভারতীয়দের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈধ ভারতীয়সহ বৈধ বিদেশীদের সংখ্যা মিলে মোট বিদেশী কর্মীর সংখ্যা ১০ লাখের কম হবে না বলে অনেকে মনে করেন। এরা বিশাল অংকের অর্থ বৈধ- বৈধপথে তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ২০১৮ সালে দেয়া তথ্য মতে, বিদেশী বৈধাবৈধ কর্মীরা ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে প্রতি বছর। গার্মেন্ট, বস্ত্র, আইসিটি ইত্যাদি খাতে বিদেশী বিশেষ করে ভারতীয়রা অধিকহারে কাজ করছে। এসব খাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ কর্মী দেশী উৎস থেকে যোগান দেয়া সম্ভব হলে এত অর্থ বিদেশে চলে যেতে পারতো না; সে অর্থ দেশের কাজে লাগতো।

গার্মেন্টপণ্য আমাদের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস। রফতানি আয়ের তিন চতুর্থাংশের বেশি আসে এই খাত থেকে। গার্মেন্টশিল্পের বয়সও কম হলো না। কিন্তু এখাতে এতদিনেও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব খুচল না কেন, সেটাই প্রশ্ন। এখন তো বাংলাদেশের গার্মেন্টখাতের দক্ষ জনবল রফতানির কথা। তার বদলে আমদানি করতে হচ্ছে কেন? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসিটি সন্দেহাতীতভাবে ব্যাপক প্রতিশ্রতিশীল একটি খাত। এখানেও দক্ষ জনবলের যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে যে স্বল্প সংখ্যক দক্ষ কর্মী আছে, তারাও স্বাচ্ছন্দে কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। বিশ্বজুড়ে আইসিটি পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে, আউট সোর্সিংয়েরও ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এই দুই খাত থেকে আমাদের আয় সামান্যই বলতে হবে। এক বিলিয়ন ডলারের মতো। অথচ সম্ভাবনা অপার। সম্ভাবনার বিবেচনায় এখাত থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় কিছুই নয়। এখাতের বিশেষজ্ঞরা এক আলোচনায় বলেছেন, এখাতের কোম্পানীগুলোকে ভারত ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগীর মোকাবিলায় আইসিটি পণ্যের মূল্যের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া চলবে না। এক্ষেত্রে একটি বাংলাদেশী ব্র্যান্ড তাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখন উৎপাদিত পণ্যের মান তুলনামূলকভাবে ভালোই। আরো উন্নত করার সুযোগ আছে। দক্ষ জনবল এই সুযোগকে বাস্তব রূপ দিতে পারে। কোনো কোনো কোম্পানীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবলের অভাবে তাদের লক্ষ্য অর্জন ব্যহত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, সরকারের যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আয় বাড়ানোর লক্ষ্য সামনে রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। আইসিটিতে দক্ষ জনবল বৃদ্ধির জন্য শিক্ষণ-প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে। পণ্যের মান উন্নত করার জন্য গবেষণার সুবিধা সম্প্রসারণ করতে হবে। যে সব কোম্পানী এখাতে কাজ করছে তাদের পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সমন্বয় সাধন করতে হবে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিশেষজ্ঞদের এখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করার ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, গার্মেন্টখাতে ভবিষ্যতে ভাটার টান লাগতে পারে, যাতে আয়ের পরিমাণ কমে যেতে পারে। আইসিটি খাতের যে অপার সম্ভবনা, তাকে যে কোনো মূল্যে কাজে লাগাতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

১০ বিলিয়ন ডলার টার্গেট

আপডেট টাইম : ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আইসিটি খাতে রফতানি আয় ২০২৩ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। উপযুক্ত উদ্যোগ-পদক্ষেপ নেয়া হলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন যে অসম্ভব নয়, সে ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের অনেকেই অবশ্য এতে সন্তুষ্ট থাকতে রাজি নন। তারা মনে করেন,  পরিকল্পিত ও সমন্বিত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই লক্ষ্যমাত্রা ১০ বিলিয়ন ডলারে নির্ধারণ ও অর্জন করা সম্ভব। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ-২০২০ বাংলাদেশের উদ্বোধনকালে যথার্থই বলেছেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল পেতে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন পূর্বশর্ত। প্রসঙ্গত তিনি বলেছেন, তথ্য প্রযুুক্তি ও স্টার্টআপে সহায়তা দিতে সরকার বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এবং প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে ন্যাশনাল স্কিল ডেভলপমেন্ট অথোরিটি কাজ করছে। তিনি এও উল্লখ করেছেন, জ্বালানি, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিগত ১১ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ওয়াকিবহাল মহল অবগত আছে, আমাদের দেশে দক্ষ মানবসম্পদের অভাব আছে এবং মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা, উদ্যোগ এবং পৃষ্ঠপোষকতারও অভাব রয়েছে। একারণেই মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বিভিন্ন মহল থেকে উচ্চারিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার তাকিদ দিয়েছেন বিভিন্ন উপলক্ষে। মন্ত্রীদের অনেকে দক্ষ মানবসম্পদের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। কিছুদিন আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার ফাইভজি মোবাইল ফোন সেবা চালুর উদ্যোগ প্রসঙ্গে বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল চয়নে ফাইভজি হলো একটি মহাসড়ক। ক’দিন আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবেশবাদীদের এক আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল পেতে হলে প্রয়োজন মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা। এটা হতে হবে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা, যাতে শিক্ষার্থী গবেষকের মতো চিন্তা করার, পাঠ করার ও লেখার দক্ষতা অর্জন করতে পারে। শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক গুণীজনসংবধনায়ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার তাকিদ দিয়ে বলা হয়েছে, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারলে দেশ বহুগুণে এগিয়ে যাবে।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের দক্ষ মানবসম্পদের অভাব আছে। জনসংখ্যা কম থাকার কারণে যে, এই অভাব, তা নয়। কার্যত, বাংলাদেশ অতিরিক্ত জনসংখ্যার একটি দেশ। কিন্তু এই জনশক্তিকে সম্পদে রূপান্তর করার উদ্যোগ ও ব্যবস্থার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, তা কারিগরি ও কর্মমুখী নয়। ফলে কারিগরি কর্মযোগ্যতা ছাড়াই শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত হচ্ছে এবং বেকার থাকতে বাধ্য হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের কর্মসংস্থানের সুযোগ অত্যন্ত কম এবং প্রযুক্তির ব্যবহার-প্রসারে সেই সুযোগও ক্রমশ কমছে। কাজেই। বিপুল সংখ্যক বেকারের কর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও কর্মমুখী শিক্ষা অপরিহার্য। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি কর্মী কাজ করছে। তাদের বেশির ভাগ অদক্ষ বা আধদক্ষ। এ জন্য তাদের বেতনভাতাও তুলনামূলকভাবে কম। তারা যদি সবাই দক্ষ হতো, তাহলে বর্তমান অপেক্ষা আরো কয়েকগুণ বেশি রেমিট্যান্স আসতো এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরো সবল হতো। দেশের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি বিদ্যমান। এ জন্যে বিপুল সংখ্যাক বিদেশী বিশেষত ভারতীয় কর্মী কাজ করছে। তাদের প্রকৃত সংখ্যা কত, তার হিসাব নেই। ডয়সে ভেলের প্রতিবেদনে অবৈধ ভারতীয়দের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈধ ভারতীয়সহ বৈধ বিদেশীদের সংখ্যা মিলে মোট বিদেশী কর্মীর সংখ্যা ১০ লাখের কম হবে না বলে অনেকে মনে করেন। এরা বিশাল অংকের অর্থ বৈধ- বৈধপথে তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ২০১৮ সালে দেয়া তথ্য মতে, বিদেশী বৈধাবৈধ কর্মীরা ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে প্রতি বছর। গার্মেন্ট, বস্ত্র, আইসিটি ইত্যাদি খাতে বিদেশী বিশেষ করে ভারতীয়রা অধিকহারে কাজ করছে। এসব খাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ কর্মী দেশী উৎস থেকে যোগান দেয়া সম্ভব হলে এত অর্থ বিদেশে চলে যেতে পারতো না; সে অর্থ দেশের কাজে লাগতো।

গার্মেন্টপণ্য আমাদের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস। রফতানি আয়ের তিন চতুর্থাংশের বেশি আসে এই খাত থেকে। গার্মেন্টশিল্পের বয়সও কম হলো না। কিন্তু এখাতে এতদিনেও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব খুচল না কেন, সেটাই প্রশ্ন। এখন তো বাংলাদেশের গার্মেন্টখাতের দক্ষ জনবল রফতানির কথা। তার বদলে আমদানি করতে হচ্ছে কেন? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসিটি সন্দেহাতীতভাবে ব্যাপক প্রতিশ্রতিশীল একটি খাত। এখানেও দক্ষ জনবলের যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে যে স্বল্প সংখ্যক দক্ষ কর্মী আছে, তারাও স্বাচ্ছন্দে কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। বিশ্বজুড়ে আইসিটি পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে, আউট সোর্সিংয়েরও ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এই দুই খাত থেকে আমাদের আয় সামান্যই বলতে হবে। এক বিলিয়ন ডলারের মতো। অথচ সম্ভাবনা অপার। সম্ভাবনার বিবেচনায় এখাত থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় কিছুই নয়। এখাতের বিশেষজ্ঞরা এক আলোচনায় বলেছেন, এখাতের কোম্পানীগুলোকে ভারত ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগীর মোকাবিলায় আইসিটি পণ্যের মূল্যের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া চলবে না। এক্ষেত্রে একটি বাংলাদেশী ব্র্যান্ড তাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখন উৎপাদিত পণ্যের মান তুলনামূলকভাবে ভালোই। আরো উন্নত করার সুযোগ আছে। দক্ষ জনবল এই সুযোগকে বাস্তব রূপ দিতে পারে। কোনো কোনো কোম্পানীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবলের অভাবে তাদের লক্ষ্য অর্জন ব্যহত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, সরকারের যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আয় বাড়ানোর লক্ষ্য সামনে রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। আইসিটিতে দক্ষ জনবল বৃদ্ধির জন্য শিক্ষণ-প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে। পণ্যের মান উন্নত করার জন্য গবেষণার সুবিধা সম্প্রসারণ করতে হবে। যে সব কোম্পানী এখাতে কাজ করছে তাদের পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সমন্বয় সাধন করতে হবে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিশেষজ্ঞদের এখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করার ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, গার্মেন্টখাতে ভবিষ্যতে ভাটার টান লাগতে পারে, যাতে আয়ের পরিমাণ কমে যেতে পারে। আইসিটি খাতের যে অপার সম্ভবনা, তাকে যে কোনো মূল্যে কাজে লাগাতে হবে।