ঢাকা , রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করুন

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ রাজধানীর বনানী টিঅ্যান্ডটি বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে তিন শতাধিক ঘর পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের নিঃস্ব হওয়ার বিষয়টি গভীর দুঃখজনক। সর্বস্বান্ত হওয়া দরিদ্র বস্তিবাসী যাতে এ বিপর্যয় ও ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে, এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

শুক্রবার দিবাগত রাতে ভয়াবহ এ আগুনের সূত্রপাত হলে ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় ৪ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও বস্তিবাসীর জীবন-জীবিকা তছনছ করে দেয়া এ আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়রা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। অবশ্য ঘটনার পরপরই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও ঘটনার সার্বিক তদন্তে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস অথবা কয়লা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে, এমন সন্দেহও অমূলক নয়। এটাকে ‘পরিকল্পিত নাশকতা’ ভাবার কারণ ১০ বছর আগেও একবার এ বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল।

উদ্বেগজনক হল, দেশে অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এতে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রচুর প্রাণহানিও ঘটছে। তারপরও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেন হচ্ছে, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত।

অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, কোনো দুর্ঘটনার পর সাধারণত হোতাদের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন প্রভৃতি আয়োজন করে কিছুদিন বেশ সরব ভূমিকা পালন করা হয়। পরে বিষয়টি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে লালবাগের নিমতলীতে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে।

নিমতলীর হৃদয়বিদারক ওই ঘটনায় অনেক মানুষ জীবন্ত দগ্ধ হয়েছিল। দুর্ঘটনার পর দাবি উঠেছিল, শুধু পুরান ঢাকা নয়, রাজধানীর যে কোনো আবাসিক এলাকায় যেন বিপজ্জনক কোনো রাসায়নিকের মজুদ না থাকে। জনদাবির প্রেক্ষাপটে সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কথা ও কাজের ফারাক বেশ স্পষ্টভাবে পরিস্ফুট করেছে।

অগ্নিকাণ্ডে জীবন ও সম্পদহানির ঘটনা এ দেশে সাংবাৎসরিক। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে হলে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে; একই সঙ্গে সরকারেরও অনেক কিছু করণীয় রয়েছে বলে আমরা মনে করি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর লোকবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব যেমন রয়েছে, তেমনি অপরিসর রাস্তাঘাটের জন্য সঠিক সময়ে তারা অকুস্থলে পৌঁছতে না পারার অভিযোগও রয়েছে। মনে রাখতে হবে, অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ বা সাহায্য বিতরণ করলেই সব দোষ স্খলন হয় না। সমস্যার মূলোৎপাটনে অধিক মনোযোগ দেয়া দরকার।

অগ্নিকাণ্ড একই সঙ্গে জীবন ও সম্পদবিনাশী। বস্তিসহ অন্যান্য স্থাপনায় প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও করণীয় নির্ধারণ, উদ্ধার প্রক্রিয়া ও জনসচেতনতা যতটুকু থাকা দরকার, আমাদের প্রায় কিছুই নেই বললেই চলে। অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্যোগের সম্ভাব্য বিপদ ও ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে হলে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত।

বিশ্বের অনেক দেশে অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার চালু হয়েছে। বাংলাদেশেও এ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। এ ছাড়া বিপদ মোকাবেলায় সাধারণ মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখা এবং নিয়মিত মহড়া ও স্বেচ্ছাসেবক তৈরির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করুন

আপডেট টাইম : ০১:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ রাজধানীর বনানী টিঅ্যান্ডটি বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে তিন শতাধিক ঘর পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের নিঃস্ব হওয়ার বিষয়টি গভীর দুঃখজনক। সর্বস্বান্ত হওয়া দরিদ্র বস্তিবাসী যাতে এ বিপর্যয় ও ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে, এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

শুক্রবার দিবাগত রাতে ভয়াবহ এ আগুনের সূত্রপাত হলে ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় ৪ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও বস্তিবাসীর জীবন-জীবিকা তছনছ করে দেয়া এ আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়রা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। অবশ্য ঘটনার পরপরই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও ঘটনার সার্বিক তদন্তে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস অথবা কয়লা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে, এমন সন্দেহও অমূলক নয়। এটাকে ‘পরিকল্পিত নাশকতা’ ভাবার কারণ ১০ বছর আগেও একবার এ বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল।

উদ্বেগজনক হল, দেশে অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এতে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রচুর প্রাণহানিও ঘটছে। তারপরও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেন হচ্ছে, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত।

অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, কোনো দুর্ঘটনার পর সাধারণত হোতাদের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন প্রভৃতি আয়োজন করে কিছুদিন বেশ সরব ভূমিকা পালন করা হয়। পরে বিষয়টি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে লালবাগের নিমতলীতে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে।

নিমতলীর হৃদয়বিদারক ওই ঘটনায় অনেক মানুষ জীবন্ত দগ্ধ হয়েছিল। দুর্ঘটনার পর দাবি উঠেছিল, শুধু পুরান ঢাকা নয়, রাজধানীর যে কোনো আবাসিক এলাকায় যেন বিপজ্জনক কোনো রাসায়নিকের মজুদ না থাকে। জনদাবির প্রেক্ষাপটে সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কথা ও কাজের ফারাক বেশ স্পষ্টভাবে পরিস্ফুট করেছে।

অগ্নিকাণ্ডে জীবন ও সম্পদহানির ঘটনা এ দেশে সাংবাৎসরিক। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে হলে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে; একই সঙ্গে সরকারেরও অনেক কিছু করণীয় রয়েছে বলে আমরা মনে করি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর লোকবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব যেমন রয়েছে, তেমনি অপরিসর রাস্তাঘাটের জন্য সঠিক সময়ে তারা অকুস্থলে পৌঁছতে না পারার অভিযোগও রয়েছে। মনে রাখতে হবে, অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ বা সাহায্য বিতরণ করলেই সব দোষ স্খলন হয় না। সমস্যার মূলোৎপাটনে অধিক মনোযোগ দেয়া দরকার।

অগ্নিকাণ্ড একই সঙ্গে জীবন ও সম্পদবিনাশী। বস্তিসহ অন্যান্য স্থাপনায় প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও করণীয় নির্ধারণ, উদ্ধার প্রক্রিয়া ও জনসচেতনতা যতটুকু থাকা দরকার, আমাদের প্রায় কিছুই নেই বললেই চলে। অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্যোগের সম্ভাব্য বিপদ ও ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে হলে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত।

বিশ্বের অনেক দেশে অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার চালু হয়েছে। বাংলাদেশেও এ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। এ ছাড়া বিপদ মোকাবেলায় সাধারণ মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখা এবং নিয়মিত মহড়া ও স্বেচ্ছাসেবক তৈরির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।