বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক।
এ আইনের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা বৃদ্ধি; যেমন, জাল-জালিয়াতি বা অনিয়মের প্রমাণসাপেক্ষে একক ক্ষমতায় কোনো ব্যাংককে ‘অবসায়ন’ বা ‘লিকুইডেশন’ করা; এমডির নিচের দুই স্তরের কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে আগাম অনুমতি নেয়াসহ এসব পদের কোনো কর্মকর্তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া অব্যাহতি, বরখাস্ত বা অপসারণ না করা; ব্যাংকের পর্ষদে সর্বোচ্চ পরিচালক ২০ জন এবং এর মধ্যে কমপক্ষে ১১ জন স্বতন্ত্র পরিচালক ও শেয়ারধারী বা উদ্যোক্তা পরিচালক সর্বোচ্চ ৯ জন থাকার বিধান; স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ ইত্যাদি প্রশংসনীয়।
এর ফলে পরিচালকদের বিভিন্ন অপকর্ম রোধ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সহজ হবে।
দেশে এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ খাতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, লুটপাট ও দুর্নীতি বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক পরিচালকরা ভাগাভাগির মাধ্যমে নিজের ও অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে যে ঋণ নিচ্ছেন, তার অধিকাংশই আর ফেরত আসছে না।
এর ফলে মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যা অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। ঋণ জালিয়াতিসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতির অবসান ঘটাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই আইনি কাঠামোর আওতায় ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম হতে হবে।
এ কথা সর্বজনবিদিত যে, অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের মালিক ও পরিচালক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরাও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান। এর ফলে তাদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব অনেকটাই শিথিল।
এ সুযোগে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তারা নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছেন। ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতি দেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে গ্রাস করে ফেলছে এবং এর ফলে খেলাপি ঋণ, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বাড়ছে।
আমরা মনে করি, অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত দুর্নীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিদ্যমান থাকার কারণেই ব্যাংক ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না।
প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে ব্যর্থ হলে এর ফল ভালো হবে না, তা নিশ্চিত। এতে দেশের অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চারের কাজটি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এ প্রেক্ষাপটে ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়া দ্রুত চূড়ান্ত করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।