বন্যায় ফসল হারানোর পর এখন তীব্র জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলা করছে হাওরবাসী। হাওরের বহু পরিবার তাদের খাদ্যোপকরণ সংগ্রহ করেও জ্বালানির অভাবে রান্নাবান্না করতে না পেরে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাদিপাত করছে। হাওরে কোন প্রাকৃতিক গ্যাস লাইনের সংযোগ নেই। জ্বালানি কাঠের জন্য পর্যাপ্ত গাছপালাও নেই। পাওয়া যায় না এক সময়ের জ্বালানি নিম্নমানের কয়লা বা স্থানীয় ভাষায় কছম বা কচ কয়লা। এখানকার পরিবারগুলোর জ্বালানির প্রধান উপকরণ হচ্ছে বোরো ধানের খড়। এছাড়া গরু-মহিষের গোবরের মুইটা এবং শুকনো গোবরের চটও অন্যতম জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এবার হারিয়ে গেছে খড়। গোখাদ্যের সঙ্কটের কারণে গরু-মহিষ বিক্রি করে দেওয়ায় দেখা দিয়েছে গোবর সঙ্কট।
কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সংযোগস্থল বিস্তীর্ণ এই হাওর অঞ্চলের মানুষ মোটা ভাত, মোটা কাপড়ে সুখেই দিনাতিপাত করতো। বোরো উৎপাদনকারী এক ফসলি এই অঞ্চলের মানুষ কখনো ভাতের অভাব অনুভব করত না। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক রুদ্ররোষে এই অঞ্চলের মানুষ ক্রমাগত নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর নতুন নতুন বসতি স্থাপনের ফলে হারিয়ে গেছে এই অঞ্চলের বনজঙ্গল, বাঁশের ঝোপঝাড়। এই এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার শুরু হলেও খুব কম সংখ্যক পরিবারই তা ব্যবহার করতে পারে। অসংখ্য দরিদ্র পরিবার আছে যারা গ্যাস গ্যাস সিলিন্ডার চেনেই না। এলাকার বিভিন্ন হোটেল বা চায়ের দোকানে ‘কয়েল’ নামে ভুসির তৈরি কারখানাজাত জ্বালানি ব্যবহার করছে। এগুলিরও মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাচ্ছে। যে শুকনো গোবরের বিশটি চট বিশ থেকে ত্রিশ টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন দেড়শ থেকে ১৬০ টাকা।
গাছের লাকড়ি পাওয়া যায় না বললেই চলে। স্থানীয়ভাবে কিছু স-মিলে কাঠের ভুসি এবং পরিত্যক্ত অংশ লাকড়ি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। এগুলোরও দাম অনেক চড়া। চার-পাঁচজনের রান্না-বান্না চালাতে মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা জ্বালানি খরচ গুনতে হচ্ছে। দরিদ্র পরিবারের মহিলারা প্রতিবছর বোরো ধান কাটার পর হাওরে পড়ে থাকা ধান গাছের নিচের অংশ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করার জন্য কেটে এনে সারা বছর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করত। এবার অকাল বন্যায় জমি তলিয়ে যাওয়ায় এসব জ্বালানিও আনতে পারেনি। এব্যাপারে হাওরাঞ্চলবাসী ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বাবু বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরকার যেভাবে ভূতর্কি মূল্যে ত্রাণ বিতরণ করছে, সেভাবে জ্বালানি সরবরাহ করা হলে আপদকালীন সময়ে গরিব মানুষেরা কিছুটা পরিত্রাণ পেতে পারত।