ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হামলায় জোট সরকার যে জড়িত তার প্রমাণ আছে: আমু

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমুর স্থির বিশ্বাস এই ঘটনায় সে সময়ের সরকার জড়িত। এটা সন্দেহ নয়, নানা ঘটনায় প্রমাণিত বলেও মনে করেন তিনি।

ঢাকাটাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন আমু। জানান, ওই হামলায় শরীরে বিঁধা স্প্লিন্টারগুলো এখনও যন্ত্রণা দেয়। সেই দিনের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমু বর্তমান সরকারের শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

২১ আগস্টের হামলাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবোরে হত্যার মাধ্যমে হত্যার রাজনীতি শুরু। এরপর জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হয়েছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে যারা সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তাদের অনেককেই হত্যা করা হয়েছে, তাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তাঁরাই একটি বিশেষ ধারা সংযুক্ত হলো ২১ আগস্ট। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা তাদের প্রতিহিংসা চারিতার্থ কারার জন্য এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাথে একটা কনফেডারেশন করার চিন্তাভাবনা থেকে তারা বার বার স্বাধীনতার সপক্ষের নেতৃত্বের উপর আঘাত করছে।

বঙ্গবন্ধুকে আঘাতের পরে আমরা লক্ষ্য করেছি মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে হত্যা, সংবিধানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যুক্ত করা এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো মুক্তিযুদ্ধে যারা সক্রিয়ভাবে পাকিস্তানের দালালি করে হত্যা, ধর্ষণ করে তাদের শুরু থেকে জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক, সমাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পুর্নবাসন করার চেষ্টা করে। শেখ হাসিনা দেশে আসার পর যখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখলেন এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন তখনই বারবার তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়।

সেদিন কেন আপনারা কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন?

দেশের বিভিন্ন জায়গায় বোমা হামলা, তৎকালীন বৃটিশ হাই কমিশনারের উপর গ্রেনেড হামলা, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উপর হামলা, শাহ এম এস কিবারিয়াকে হত্যার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল। সেই দিন তৎকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় এবং সহযোগিতায় লাস্ট টার্গেট শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলা করা হয়। এ হামলা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে ধ্বংস করার জন্যই করা হয়।

তাহলে আপনি ভাবছেন, শেখ হাসিনাই ছিলেন এই হামলার প্রধান লক্ষ্য?

এ তো স্পষ্টই। তাকে হত্যার জন্যই তো হামলা হয়েছিল। ট্রাকে ছোড়া গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হলে আল্লাহই জানেন কী হতো। তারপরও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, নেত্রীকে ঘিরে ধরে নিজের স্প্লিন্টারের আঘাত নিয়েছি। চেষ্টা করেছি নেত্রীকে অক্ষত রাখার। আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি, তার মেয়েকে হারাতে চাইনি।

সেদিনের ঘটনাটি কীভাবে ঘটল?

ওই দিন আমাদের মিটিং হওয়ার কথা ছিলো মুক্তাঙ্গনে কিন্তু পুলিশ সেখানে বাধা দেয়। তারা আমাদের মাইক খুলে নিয়ে যায়। তাই আমরা বাধ্য হয়েই প্রোগ্রাম শিফট করে নিয়ে যায়। একটা অস্থায়ী মঞ্চ প্রোগ্রাম শুরু করি। নেত্রী নির্ধারিত সময়েই আসবেন ধরেই আমরা আমাদের বক্তাদের তালিকা তৈরি করি। কিন্তু লাস্ট বক্তা হানিফ (মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) যখন বক্তৃতা দিচ্ছেলেন তখন নেত্রী আসলেন। উঠার সময় নেত্রী বললেন পথে পথে এত মিছিল, এত লোক তাই দেরি হয়ে গেল। আর আমরাও যখন আড়াইটার দিকে মিটিং এ আসি তখন রাস্তায় প্রচুর লোক ছিলো। তিনি (শেখ হাসিনা) এসেই বক্তৃতা শুরু করলেন। নেত্রী বক্তব্য শেষ করে যখন নামবেন তখনই প্রথম গ্রেনেড হামলা হয়। তখন আমরা ওনাকে ট্রাকের উপর নিয়ে যাই। মাঝে যখন তাকে আমরা গাড়িতে উঠিয়ে দিতে যাচ্ছি তখন গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি এবং গ্রেনেড হামলা করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরে তৃতীয়বার আবারও গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়।

এই হামলার জন্য সেই সময়ের সরকারকে দায়ী করছেন কেন?

সরকার মুক্তাঙ্গন থেকে বাধা দিয়ে আমাদের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নিয়ে আসলো কিন্তু এখানে বাধা দিলো না বরং হতাহত যখন হচ্ছে তখন লাঠিচার্জ এবং টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করছে। এটা কেন? তাহলে যারা গ্রেনেড নিক্ষেপকারী তাদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিল।

ঘটনা এখানেই শেষ না, যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের একটি প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানালেও তারা দেশে এসে সরকারের কর্মকাণ্ডে বিরক্তি প্রকাশ করে। ওই সময় পুলিশ এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত গায়েব করে দেয়।

আবার আমরা নিজেরাই এই হামলা চালিয়েছি, এমন কথাও প্রচার করে জোট সরকার। সেই সঙ্গে তারা জজ মিয়া নাটক সাজায়। আবার এক বিচারককে দিয়ে এক হাস্যকর তদন্ত করে যাতে বলা হয়, একটি প্রতিবেশী দেশে এই হামলার মহড়া চালান হয়েছে। এর সবই একটাই দিক নির্দেশ করে, সেই সময়ের সরকার আসলে আমাদের নেত্রীকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল।

তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা তো ঘটনার দায় অস্বীকারের জন্যও হতে পারে…

কেবল এই কয়টি ঘটনাই নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা তদন্তেই তো সে সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টু আসামি হয়েছেন। পিণ্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনকে তো জোট সরকারই বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। আবার এই মামলার আসামি ফাঁসি কার্যকর হওয়া মুফতি হান্নানের জবানবন্দির ভিডিও তো এখনও ইউটিউবে পাওয়া যায়। তাতে তো হামলার পরিকল্পনার পূর্ণ বিবরণ আছে। হাওয়া ভবনে একাধিক বৈঠকের কথা তো মুফতি হান্নান নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন। সেই বৈঠকে তারেক রহমান, মুজাহিদ তো উপস্থিত ছিলেন।

আপনার সেদিন কী অবস্থা হয়েছিল?

আমি আহত কখন হয়েছি সেটা আমি বুঝতে পারি নাই। নেত্রী যাওয়ার পর যখন আমি উঠলাম। আমাকে যখন ট্রাক থেকে নামিয়ে আনা হল, তখন দেখলাম আমার সারা শরীর রক্তে ভেজা। শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে। শরীরের সব জায়গায় স্প্লিন্টার ছিল। এখন শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্প্রিন্টার রয়েছে, তা বের করতে গেলে আমার রগ কাটা যাবে, এ জন্য বের করা সম্ভব নয়।

মামলার বিচার তো হলো না…

তৎকালীন সরকার (বিএনপি-জামায়াত জোট) একটা প্রহসনমূলক তদন্ত করেছিল যাতে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। এখন আমাদের তদন্তেও যাতে আপত্তি না থাকে এবং তা স্বচ্ছ হয়। প্রকৃত দোষীদের বের করা উচিত এবং তারা শাস্তি পান তা আমরা চাই। এখানে সাক্ষ্যগ্রহণ সময়সাপেক্ষ। তারা আবার অনুপস্থিত থাকে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে, আইন আদালত রয়েছে। এ প্রক্রিয়া বাদ দিতে গেলে তো এখন আবার হইচই শুরু হয়ে যাবে।

শেখ হাসিনার ওপর তো বারবার হামলার চেষ্টা হচ্ছে। তার নিরাপত্তার দিকটিতে বিশেষ কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?

এখন যেভাবে নিরাপত্তা চলছে, সেভাবেই চলবে। আর এ পরিকল্পনাতো পরিষ্কার বলা যাবে না। তাতে শত্রুপক্ষ জেনে যাবে। তবে আমরা সবসময়ই সতর্ক আছি। তার উপর যে হামলা হয়েছে তার বেশিরভাগেই হয়েছে বিরোধী দলে থাকাকালীন সময়ে।

এই হামলা মামলায় অন্যতম আসামি তারেক রহমান তো বিদেশে। তাকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কী উদ্যোগ আছে?

এ বিষয়টি আমি জানি না।

হামলার পর আপনারা রাজনৈতিকভাবে কী কর্মসূচি দিয়েছিলেন?

আমাদের উপর গ্রেনেড হামলা হবে, এ জন্য আমরা ঘরে বসে থাকব তা তো হতে পারে না। আমরা আমাদের কাজ করেছি। আমরা তো ২১ আগস্টের পরে ঘরে বসে থাকি নাই। আমরা নিয়মিত মিছিল, মিটিং এ উপস্থিত ছিলাম। শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যা চেষ্টার পরও তো তিনি থেমে থাকেন নাই। জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে।

আর এই হামলার পর জোট সরকারের বিরুদ্ধে যে জনমত গঠন হয়েছিল তার ফলেই তো আজ তারা ক্ষমতা থেকে বাইরে। জনগণ এখন তাদেরকে আর গ্রহণ করতে রাজি নয়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

হামলায় জোট সরকার যে জড়িত তার প্রমাণ আছে: আমু

আপডেট টাইম : ১১:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমুর স্থির বিশ্বাস এই ঘটনায় সে সময়ের সরকার জড়িত। এটা সন্দেহ নয়, নানা ঘটনায় প্রমাণিত বলেও মনে করেন তিনি।

ঢাকাটাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন আমু। জানান, ওই হামলায় শরীরে বিঁধা স্প্লিন্টারগুলো এখনও যন্ত্রণা দেয়। সেই দিনের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমু বর্তমান সরকারের শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

২১ আগস্টের হামলাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবোরে হত্যার মাধ্যমে হত্যার রাজনীতি শুরু। এরপর জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হয়েছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে যারা সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তাদের অনেককেই হত্যা করা হয়েছে, তাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তাঁরাই একটি বিশেষ ধারা সংযুক্ত হলো ২১ আগস্ট। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা তাদের প্রতিহিংসা চারিতার্থ কারার জন্য এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাথে একটা কনফেডারেশন করার চিন্তাভাবনা থেকে তারা বার বার স্বাধীনতার সপক্ষের নেতৃত্বের উপর আঘাত করছে।

বঙ্গবন্ধুকে আঘাতের পরে আমরা লক্ষ্য করেছি মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে হত্যা, সংবিধানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যুক্ত করা এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো মুক্তিযুদ্ধে যারা সক্রিয়ভাবে পাকিস্তানের দালালি করে হত্যা, ধর্ষণ করে তাদের শুরু থেকে জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক, সমাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পুর্নবাসন করার চেষ্টা করে। শেখ হাসিনা দেশে আসার পর যখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখলেন এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন তখনই বারবার তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়।

সেদিন কেন আপনারা কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন?

দেশের বিভিন্ন জায়গায় বোমা হামলা, তৎকালীন বৃটিশ হাই কমিশনারের উপর গ্রেনেড হামলা, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উপর হামলা, শাহ এম এস কিবারিয়াকে হত্যার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল। সেই দিন তৎকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় এবং সহযোগিতায় লাস্ট টার্গেট শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলা করা হয়। এ হামলা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে ধ্বংস করার জন্যই করা হয়।

তাহলে আপনি ভাবছেন, শেখ হাসিনাই ছিলেন এই হামলার প্রধান লক্ষ্য?

এ তো স্পষ্টই। তাকে হত্যার জন্যই তো হামলা হয়েছিল। ট্রাকে ছোড়া গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হলে আল্লাহই জানেন কী হতো। তারপরও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, নেত্রীকে ঘিরে ধরে নিজের স্প্লিন্টারের আঘাত নিয়েছি। চেষ্টা করেছি নেত্রীকে অক্ষত রাখার। আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি, তার মেয়েকে হারাতে চাইনি।

সেদিনের ঘটনাটি কীভাবে ঘটল?

ওই দিন আমাদের মিটিং হওয়ার কথা ছিলো মুক্তাঙ্গনে কিন্তু পুলিশ সেখানে বাধা দেয়। তারা আমাদের মাইক খুলে নিয়ে যায়। তাই আমরা বাধ্য হয়েই প্রোগ্রাম শিফট করে নিয়ে যায়। একটা অস্থায়ী মঞ্চ প্রোগ্রাম শুরু করি। নেত্রী নির্ধারিত সময়েই আসবেন ধরেই আমরা আমাদের বক্তাদের তালিকা তৈরি করি। কিন্তু লাস্ট বক্তা হানিফ (মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) যখন বক্তৃতা দিচ্ছেলেন তখন নেত্রী আসলেন। উঠার সময় নেত্রী বললেন পথে পথে এত মিছিল, এত লোক তাই দেরি হয়ে গেল। আর আমরাও যখন আড়াইটার দিকে মিটিং এ আসি তখন রাস্তায় প্রচুর লোক ছিলো। তিনি (শেখ হাসিনা) এসেই বক্তৃতা শুরু করলেন। নেত্রী বক্তব্য শেষ করে যখন নামবেন তখনই প্রথম গ্রেনেড হামলা হয়। তখন আমরা ওনাকে ট্রাকের উপর নিয়ে যাই। মাঝে যখন তাকে আমরা গাড়িতে উঠিয়ে দিতে যাচ্ছি তখন গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি এবং গ্রেনেড হামলা করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরে তৃতীয়বার আবারও গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়।

এই হামলার জন্য সেই সময়ের সরকারকে দায়ী করছেন কেন?

সরকার মুক্তাঙ্গন থেকে বাধা দিয়ে আমাদের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নিয়ে আসলো কিন্তু এখানে বাধা দিলো না বরং হতাহত যখন হচ্ছে তখন লাঠিচার্জ এবং টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করছে। এটা কেন? তাহলে যারা গ্রেনেড নিক্ষেপকারী তাদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিল।

ঘটনা এখানেই শেষ না, যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের একটি প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানালেও তারা দেশে এসে সরকারের কর্মকাণ্ডে বিরক্তি প্রকাশ করে। ওই সময় পুলিশ এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত গায়েব করে দেয়।

আবার আমরা নিজেরাই এই হামলা চালিয়েছি, এমন কথাও প্রচার করে জোট সরকার। সেই সঙ্গে তারা জজ মিয়া নাটক সাজায়। আবার এক বিচারককে দিয়ে এক হাস্যকর তদন্ত করে যাতে বলা হয়, একটি প্রতিবেশী দেশে এই হামলার মহড়া চালান হয়েছে। এর সবই একটাই দিক নির্দেশ করে, সেই সময়ের সরকার আসলে আমাদের নেত্রীকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল।

তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা তো ঘটনার দায় অস্বীকারের জন্যও হতে পারে…

কেবল এই কয়টি ঘটনাই নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা তদন্তেই তো সে সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টু আসামি হয়েছেন। পিণ্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনকে তো জোট সরকারই বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। আবার এই মামলার আসামি ফাঁসি কার্যকর হওয়া মুফতি হান্নানের জবানবন্দির ভিডিও তো এখনও ইউটিউবে পাওয়া যায়। তাতে তো হামলার পরিকল্পনার পূর্ণ বিবরণ আছে। হাওয়া ভবনে একাধিক বৈঠকের কথা তো মুফতি হান্নান নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন। সেই বৈঠকে তারেক রহমান, মুজাহিদ তো উপস্থিত ছিলেন।

আপনার সেদিন কী অবস্থা হয়েছিল?

আমি আহত কখন হয়েছি সেটা আমি বুঝতে পারি নাই। নেত্রী যাওয়ার পর যখন আমি উঠলাম। আমাকে যখন ট্রাক থেকে নামিয়ে আনা হল, তখন দেখলাম আমার সারা শরীর রক্তে ভেজা। শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে। শরীরের সব জায়গায় স্প্লিন্টার ছিল। এখন শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্প্রিন্টার রয়েছে, তা বের করতে গেলে আমার রগ কাটা যাবে, এ জন্য বের করা সম্ভব নয়।

মামলার বিচার তো হলো না…

তৎকালীন সরকার (বিএনপি-জামায়াত জোট) একটা প্রহসনমূলক তদন্ত করেছিল যাতে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। এখন আমাদের তদন্তেও যাতে আপত্তি না থাকে এবং তা স্বচ্ছ হয়। প্রকৃত দোষীদের বের করা উচিত এবং তারা শাস্তি পান তা আমরা চাই। এখানে সাক্ষ্যগ্রহণ সময়সাপেক্ষ। তারা আবার অনুপস্থিত থাকে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে, আইন আদালত রয়েছে। এ প্রক্রিয়া বাদ দিতে গেলে তো এখন আবার হইচই শুরু হয়ে যাবে।

শেখ হাসিনার ওপর তো বারবার হামলার চেষ্টা হচ্ছে। তার নিরাপত্তার দিকটিতে বিশেষ কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?

এখন যেভাবে নিরাপত্তা চলছে, সেভাবেই চলবে। আর এ পরিকল্পনাতো পরিষ্কার বলা যাবে না। তাতে শত্রুপক্ষ জেনে যাবে। তবে আমরা সবসময়ই সতর্ক আছি। তার উপর যে হামলা হয়েছে তার বেশিরভাগেই হয়েছে বিরোধী দলে থাকাকালীন সময়ে।

এই হামলা মামলায় অন্যতম আসামি তারেক রহমান তো বিদেশে। তাকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কী উদ্যোগ আছে?

এ বিষয়টি আমি জানি না।

হামলার পর আপনারা রাজনৈতিকভাবে কী কর্মসূচি দিয়েছিলেন?

আমাদের উপর গ্রেনেড হামলা হবে, এ জন্য আমরা ঘরে বসে থাকব তা তো হতে পারে না। আমরা আমাদের কাজ করেছি। আমরা তো ২১ আগস্টের পরে ঘরে বসে থাকি নাই। আমরা নিয়মিত মিছিল, মিটিং এ উপস্থিত ছিলাম। শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যা চেষ্টার পরও তো তিনি থেমে থাকেন নাই। জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে।

আর এই হামলার পর জোট সরকারের বিরুদ্ধে যে জনমত গঠন হয়েছিল তার ফলেই তো আজ তারা ক্ষমতা থেকে বাইরে। জনগণ এখন তাদেরকে আর গ্রহণ করতে রাজি নয়।