ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরে ইউরেনিয়াম, ধান পচে মাছ মরে

রুনা লেইস:

ইউরেনিয়ামের মত উচ্চমূল্যের একটি খনিজ সম্পদের মজুদ নিম্ন আয়ের যে কোন দেশকে রাতারাতি উচ্চ পর্যায়ের ধনী দেশে উন্নীত করতেই পারে।

কিন্তু যারা তেজষ্ক্রিয় মৌল সম্পর্কে কিছুটা হলেও ওয়াকিবহাল তারা কেউই বাংলাদেশের মত ঘন বসতিপূর্ণ একটি রাষ্ট্রে ইউরেনিয়ামের মত উচ্চমূল্যের তেজষ্ক্রিয় খনিজ প্রাপ্তির সংবাদটা খুব সুখবর বলে মনে করবেন না, করেননি হয়তো এটাই স্বাভাবিক ছিল।

যে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের ক্ষেত্রেই মাগুরছড়ার মত, টেংরাটিলার মত বিষ্ফোরণ ঘটে যায় সেখানে তেজষ্ক্রিয় পদার্থের উত্তোলনের নিরাপত্তা কে দেবে?

তবে আমার তখন মনে হয়েছে এরকম প্লানটেশন করতে হলে যেরকম অর্থ ও প্রযুক্তির প্রয়োজন সেটা করতে হলে বাংলাদেশকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নানা রকম বাণিজ্যিক চুক্তি করতে হবে। আর তা করতে হলে সহজে এসব খনিতে কোন কার্যক্রম জনগণের অগোচরে চালানো যাবে না। ফলে অতো সহজে ইউরেনিয়াম ঘটিত কোন সমস্যা হয়তো আমাদের মোকাবেলা করতে হবে না।

কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায় আবির্ভুত হবে সেটা কে জানতো? আমাদের সুরমা ভ্যালী আর ব্রহ্মপুত্র ভ্যালী ঘিরে থাকা সব সুন্দরী এবং দুর্গম নীলাভ পাহাড়সারির অধিকাংশই ভারতের আসাম, মেঘালয়, মনিপুর, অরুনাচল, ত্রিপুরা, হয়ে মিজোরাম থেকে দক্ষিণে মায়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত। আর অন্যদেশের দুগর্ম এলাকায় খনি খননের কারণে যদি কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে সেটার ভুক্তভোগি হবো আমরা এই নিম্নাঞ্চলের উপত্যকার মানুষ সেটা কি করে জানবো?

আমার খনি খননকার্য পদ্ধতি সম্বন্ধীয় কোন বাস্তব ধারণাই ছিল না। যা জানা সেটুকু বইপত্র পড়ে আর টিভি দেখে। ক’দিন আগে ছাতকের লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে গিয়ে কিছুটা ধারণা পেলাম। দেখলাম কি করে ছাতক থেকে সতেরো কিমি দুরে ভারতের মেঘালয়ে থেকে ডিনামাইট দিয়ে বিষ্ফোরন ঘটিয়ে চুনাপাথর সংগ্রহ করে রোপওয়ে ব্যবহার করে ফ্যাক্টরিতে রো মেটেরিয়াল আনা হচ্ছে। ওখানে প্রায় চৌদ্দশ ডিগ্রি উচ্চতাপমাত্রায় সিমেন্টের প্রাথমিক কাঁচামালগুলি সংযুক্ত করা হচ্ছে। উচ্চ তাপমাত্রা ও যে কোনরকম রেডিয়েশনের জন্য সেখানে নিরাপত্তা ছিল অনেক বেশি।এটা আমার জন্য বাস্তব একটা অভিজ্ঞতা।

প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়ার প্রধান উৎস হল রেডন গ্যাস (Redon Gas)।এটি বাতাস থেকে ৮গুন ভারী।এর ৩টি প্রাকৃতিক আইসোটোপ আছে।মূলত Redium,Thorium ও Uranium এর তেজস্ক্রিয়া থেকে এটি সৃষ্টি হয়।

প্রাকৃতিক তেজষ্ক্রিয়তা রেডন গ্যাস থেকেই বেশি হয়। আর সেটা ওপেন পীট পদ্ধতিতে খনি খননের সময় ঘটতে পারে।
প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থের অসতর্ক ব্যবহার এবং কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহারের ফলে তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণজনিত কারণে পরিবেশে স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয়তার চেয়ে অধিকমাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা বা Radiation বৃদ্ধির ঘটনাকে তেজস্ক্রিয়দূষণ বলে ।তেজস্ক্রিয় দূষণের উৎসকে দুভাগে ভাগ করা যায় ।

১. প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় দূষণ – মহাজাগতিক রশ্মি থেকে সৃষ্ট অর্ধজীবন সম্পন্ন কার্বন 14 এবং ট্রাইট্রিয়াম (হাইড্রোজেন -3) প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় মৌল ও ভূ-ত্বকে অবস্থিত ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের বিভিন্ন আকরিক দূষণ সৃষ্টি করে থাকে।

২. মনুষ্যসৃষ্ট উৎস – তেজস্ক্রিয় পদার্থের খনন ও ধৌতকরন ইত্যাদির ফলে দূষণ ঘটে ।এছাড়াও ইউরেনিয়াম 238 এবং থোরিয়াম 232, আয়োডিন 125 ইত্যাদি তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যাবহারের অসাবধানতা থেকে দূষণ সৃষ্টি হয়ে থাকে ।

এবার আসি ইউরেনিয়ামের কথায়। ১৭৮৯ সালে বিজ্ঞানী মার্টিন হাইনরিখ ক্ল্যাপরথ ইউরেনিয়াম আবিষ্কার করেন, আর ১৮৯৬ বিজ্ঞানী হেনরি বেকেরেল এর তেজষ্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন।

ইউরেনিয়াম খুবই দামি একটু ধাতু। নেপচুনিয়াম আবিষ্কারের আগে ইউরেনিয়ামই ছিল সবচেয়ে ভারি মৌল। সোনালী সাদা বর্নের এই ধাতুটি পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য উপাদান। সে কারণেই এর বহন ও ব্যবসা বাণিজ্য সর্বসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ।

ইউরেনিয়াম সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের তেমন আগ্রহ বা ধারণা না থাকলেও পারমাণবিক বিষ্ফোরণ ও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেকটাই জানা আছে সবার। একসময়ের চেরনোবিল আর সম্প্রতিকালে ফুকুসিমার বিষ্ফোরণে তেজষ্ক্রীয় পদার্থ এবং এর ভয়াবহতা নিয়ে কিছুটা হলেও জেনেছে মানুষ।

ওপেন পীট পদ্ধতিতে ভারতের রানিকোর এলাকাতে ইউরেনিয়াম উত্তোলন করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে ওই এলাকা থেকে তেজষ্ক্রিয় জল বা ভারি পানি যে কোন পাহাড়ী অঞ্চলের ফাটলে জমা থাকতে পারে যা বৃষ্টি ও নদীর জল বাহিত হয়ে হাওড় এলাকার মাছ, হাঁস সহ অন্যান্য জীবের মৃত্যুর কারণ।

বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ গ্রীষ্মঋতুতে যে দাবদাহ ও উত্তাপ হচ্ছে সেটা নিয়ে বহু কথাই হচ্ছে। পরিবেশ বিদরা সন্মেলন করছেন কিন্তু বৈশ্যিক উষ্ণতা কমাবার কোন উপায় বের করতে সক্ষম হয়েছেন কিনা তা জানা যায় নি। মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে।
মহাকাশে যে সকল সুপারনোভা বা অতিনবতারকার জন্ম হয় তখন ইউরেনিয়ামের মত তেজষ্ক্রিয় মৌল উৎপন্ন হয়।

প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্রে আকাশের যে দুটি তারকামন্ডলীকে উগ্র বা ক্ষ্যাপা বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে সেগুলো হলো ভরণী ও বিশাখা। চন্দ্র বা সূর্য এই তারকায় অবস্থান করবার সময় ভুমিকম্প বা অগ্নিবিষ্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমানে আকাশের মেষ ( অগ্নি রাশি) মন্ডলের ভরণী ( Hamal) নক্ষত্রে দিবাভাগে এ অঞ্চলে বসন্ত বিষুবমন্ডলীতে সূর্য একযোগে ইউরেনাস ও বুধ ও শুক্রের সন্মিলিত উত্তাপ দিচ্ছে। এই অতিমাত্রায় উত্তাপের ফলে পাহাড়ের অভ্যন্তরে জমাটবদ্ধ বরফ গলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। আমাদের বাংলাদেশে অগনিত পাহাড়ী ঝর্ণা হতে প্রবাহিত নদীগুলি বৃষ্টির ও পাহাড়ী ঢলের সাথে যে আকরিক সমৃদ্ধ জল বয়ে আনছে তার সাথে তেজষ্ক্রিয় জল মিশলে সেটা থামানোর কোনরকম উপায় আমাদের আছে কি না সে আমার জানা নেই।

মেঘালয়ের রানীকোর এলাকার ইউরেনিয়াম খনির নিকটবর্তী নদী থেকে বরছড়া এলাকা দিয়ে রক্তি এবং আরেকটু পশ্চিমে জাদুকাটা নদী বাংলাদেশে ঢুকেছে। তাছাড়া বৃষ্টির সময় অজস্র পাহাড়ী ঝর্ণা ও ছড়া বেয়ে জল নেমে আসে টাঙ্গুয়াসহ আশেপাশের অন্যান্য হাওড়গুলিতে। এখন দেখা যাচ্ছে একযোগে সব হাওড়ে ধান পঁচে গেছে, মাছ মরছে।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরে ইউরেনিয়াম, ধান পচে মাছ মরে

আপডেট টাইম : ০২:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

রুনা লেইস:

ইউরেনিয়ামের মত উচ্চমূল্যের একটি খনিজ সম্পদের মজুদ নিম্ন আয়ের যে কোন দেশকে রাতারাতি উচ্চ পর্যায়ের ধনী দেশে উন্নীত করতেই পারে।

কিন্তু যারা তেজষ্ক্রিয় মৌল সম্পর্কে কিছুটা হলেও ওয়াকিবহাল তারা কেউই বাংলাদেশের মত ঘন বসতিপূর্ণ একটি রাষ্ট্রে ইউরেনিয়ামের মত উচ্চমূল্যের তেজষ্ক্রিয় খনিজ প্রাপ্তির সংবাদটা খুব সুখবর বলে মনে করবেন না, করেননি হয়তো এটাই স্বাভাবিক ছিল।

যে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের ক্ষেত্রেই মাগুরছড়ার মত, টেংরাটিলার মত বিষ্ফোরণ ঘটে যায় সেখানে তেজষ্ক্রিয় পদার্থের উত্তোলনের নিরাপত্তা কে দেবে?

তবে আমার তখন মনে হয়েছে এরকম প্লানটেশন করতে হলে যেরকম অর্থ ও প্রযুক্তির প্রয়োজন সেটা করতে হলে বাংলাদেশকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নানা রকম বাণিজ্যিক চুক্তি করতে হবে। আর তা করতে হলে সহজে এসব খনিতে কোন কার্যক্রম জনগণের অগোচরে চালানো যাবে না। ফলে অতো সহজে ইউরেনিয়াম ঘটিত কোন সমস্যা হয়তো আমাদের মোকাবেলা করতে হবে না।

কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায় আবির্ভুত হবে সেটা কে জানতো? আমাদের সুরমা ভ্যালী আর ব্রহ্মপুত্র ভ্যালী ঘিরে থাকা সব সুন্দরী এবং দুর্গম নীলাভ পাহাড়সারির অধিকাংশই ভারতের আসাম, মেঘালয়, মনিপুর, অরুনাচল, ত্রিপুরা, হয়ে মিজোরাম থেকে দক্ষিণে মায়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত। আর অন্যদেশের দুগর্ম এলাকায় খনি খননের কারণে যদি কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে সেটার ভুক্তভোগি হবো আমরা এই নিম্নাঞ্চলের উপত্যকার মানুষ সেটা কি করে জানবো?

আমার খনি খননকার্য পদ্ধতি সম্বন্ধীয় কোন বাস্তব ধারণাই ছিল না। যা জানা সেটুকু বইপত্র পড়ে আর টিভি দেখে। ক’দিন আগে ছাতকের লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে গিয়ে কিছুটা ধারণা পেলাম। দেখলাম কি করে ছাতক থেকে সতেরো কিমি দুরে ভারতের মেঘালয়ে থেকে ডিনামাইট দিয়ে বিষ্ফোরন ঘটিয়ে চুনাপাথর সংগ্রহ করে রোপওয়ে ব্যবহার করে ফ্যাক্টরিতে রো মেটেরিয়াল আনা হচ্ছে। ওখানে প্রায় চৌদ্দশ ডিগ্রি উচ্চতাপমাত্রায় সিমেন্টের প্রাথমিক কাঁচামালগুলি সংযুক্ত করা হচ্ছে। উচ্চ তাপমাত্রা ও যে কোনরকম রেডিয়েশনের জন্য সেখানে নিরাপত্তা ছিল অনেক বেশি।এটা আমার জন্য বাস্তব একটা অভিজ্ঞতা।

প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়ার প্রধান উৎস হল রেডন গ্যাস (Redon Gas)।এটি বাতাস থেকে ৮গুন ভারী।এর ৩টি প্রাকৃতিক আইসোটোপ আছে।মূলত Redium,Thorium ও Uranium এর তেজস্ক্রিয়া থেকে এটি সৃষ্টি হয়।

প্রাকৃতিক তেজষ্ক্রিয়তা রেডন গ্যাস থেকেই বেশি হয়। আর সেটা ওপেন পীট পদ্ধতিতে খনি খননের সময় ঘটতে পারে।
প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থের অসতর্ক ব্যবহার এবং কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহারের ফলে তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণজনিত কারণে পরিবেশে স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয়তার চেয়ে অধিকমাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা বা Radiation বৃদ্ধির ঘটনাকে তেজস্ক্রিয়দূষণ বলে ।তেজস্ক্রিয় দূষণের উৎসকে দুভাগে ভাগ করা যায় ।

১. প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় দূষণ – মহাজাগতিক রশ্মি থেকে সৃষ্ট অর্ধজীবন সম্পন্ন কার্বন 14 এবং ট্রাইট্রিয়াম (হাইড্রোজেন -3) প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় মৌল ও ভূ-ত্বকে অবস্থিত ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের বিভিন্ন আকরিক দূষণ সৃষ্টি করে থাকে।

২. মনুষ্যসৃষ্ট উৎস – তেজস্ক্রিয় পদার্থের খনন ও ধৌতকরন ইত্যাদির ফলে দূষণ ঘটে ।এছাড়াও ইউরেনিয়াম 238 এবং থোরিয়াম 232, আয়োডিন 125 ইত্যাদি তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যাবহারের অসাবধানতা থেকে দূষণ সৃষ্টি হয়ে থাকে ।

এবার আসি ইউরেনিয়ামের কথায়। ১৭৮৯ সালে বিজ্ঞানী মার্টিন হাইনরিখ ক্ল্যাপরথ ইউরেনিয়াম আবিষ্কার করেন, আর ১৮৯৬ বিজ্ঞানী হেনরি বেকেরেল এর তেজষ্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন।

ইউরেনিয়াম খুবই দামি একটু ধাতু। নেপচুনিয়াম আবিষ্কারের আগে ইউরেনিয়ামই ছিল সবচেয়ে ভারি মৌল। সোনালী সাদা বর্নের এই ধাতুটি পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য উপাদান। সে কারণেই এর বহন ও ব্যবসা বাণিজ্য সর্বসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ।

ইউরেনিয়াম সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের তেমন আগ্রহ বা ধারণা না থাকলেও পারমাণবিক বিষ্ফোরণ ও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেকটাই জানা আছে সবার। একসময়ের চেরনোবিল আর সম্প্রতিকালে ফুকুসিমার বিষ্ফোরণে তেজষ্ক্রীয় পদার্থ এবং এর ভয়াবহতা নিয়ে কিছুটা হলেও জেনেছে মানুষ।

ওপেন পীট পদ্ধতিতে ভারতের রানিকোর এলাকাতে ইউরেনিয়াম উত্তোলন করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে ওই এলাকা থেকে তেজষ্ক্রিয় জল বা ভারি পানি যে কোন পাহাড়ী অঞ্চলের ফাটলে জমা থাকতে পারে যা বৃষ্টি ও নদীর জল বাহিত হয়ে হাওড় এলাকার মাছ, হাঁস সহ অন্যান্য জীবের মৃত্যুর কারণ।

বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ গ্রীষ্মঋতুতে যে দাবদাহ ও উত্তাপ হচ্ছে সেটা নিয়ে বহু কথাই হচ্ছে। পরিবেশ বিদরা সন্মেলন করছেন কিন্তু বৈশ্যিক উষ্ণতা কমাবার কোন উপায় বের করতে সক্ষম হয়েছেন কিনা তা জানা যায় নি। মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে।
মহাকাশে যে সকল সুপারনোভা বা অতিনবতারকার জন্ম হয় তখন ইউরেনিয়ামের মত তেজষ্ক্রিয় মৌল উৎপন্ন হয়।

প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্রে আকাশের যে দুটি তারকামন্ডলীকে উগ্র বা ক্ষ্যাপা বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে সেগুলো হলো ভরণী ও বিশাখা। চন্দ্র বা সূর্য এই তারকায় অবস্থান করবার সময় ভুমিকম্প বা অগ্নিবিষ্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমানে আকাশের মেষ ( অগ্নি রাশি) মন্ডলের ভরণী ( Hamal) নক্ষত্রে দিবাভাগে এ অঞ্চলে বসন্ত বিষুবমন্ডলীতে সূর্য একযোগে ইউরেনাস ও বুধ ও শুক্রের সন্মিলিত উত্তাপ দিচ্ছে। এই অতিমাত্রায় উত্তাপের ফলে পাহাড়ের অভ্যন্তরে জমাটবদ্ধ বরফ গলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। আমাদের বাংলাদেশে অগনিত পাহাড়ী ঝর্ণা হতে প্রবাহিত নদীগুলি বৃষ্টির ও পাহাড়ী ঢলের সাথে যে আকরিক সমৃদ্ধ জল বয়ে আনছে তার সাথে তেজষ্ক্রিয় জল মিশলে সেটা থামানোর কোনরকম উপায় আমাদের আছে কি না সে আমার জানা নেই।

মেঘালয়ের রানীকোর এলাকার ইউরেনিয়াম খনির নিকটবর্তী নদী থেকে বরছড়া এলাকা দিয়ে রক্তি এবং আরেকটু পশ্চিমে জাদুকাটা নদী বাংলাদেশে ঢুকেছে। তাছাড়া বৃষ্টির সময় অজস্র পাহাড়ী ঝর্ণা ও ছড়া বেয়ে জল নেমে আসে টাঙ্গুয়াসহ আশেপাশের অন্যান্য হাওড়গুলিতে। এখন দেখা যাচ্ছে একযোগে সব হাওড়ে ধান পঁচে গেছে, মাছ মরছে।