ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্মাণসামগ্রীর দাম আরও বেড়েছে, বিরূপ প্রভাব পড়ছে আবাসন খাতে

দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশের সমগ্র অর্থনীতিতে। বিশেষ করে পণ্য আমদানিতে ডলার সংকটের প্রভাব ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বাড়িয়েছে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। অনেক ব্যাংক নতুন করে এলসি খুলতেও পারছে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে দেশে এক ধরনের অনিশ্চয়তার দোলাচল ছিল। তবে সব শঙ্কা কাটিয়ে বড় ধরনের ঝামেলা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন। নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও সুবাতাস বয়ে যায় দেশের আবাসন খাতে। বেশ কম ছিল নির্মাণসামগ্রীর দাম। নির্মাণের মূল উপকরণ রডের দাম প্রতি টনে আট থেকে ১০ হাজার টাকা কমে যায়, যা রেকর্ড লাখ টাকা ছাড়িয়েছিল। কমে আসে ইট, বালু ও পাথরের দামও। যদিও নির্মাণখাতের এই সুসময় বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নির্বাচন যেতে না যেতে উল্টে গেছে চিত্র। আবারও বাড়তে শুরু করেছে নির্মাণ উপকরণের দাম। ফলে গভীর সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের আবাসন খাত। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ঢাকায় ফ্ল্যাটের দাম আগে থেকেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণে আরেক দফা নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় মধ্যবিত্তের ফ্ল্যাট কেনা এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবাসন ব্যবসায়ীরা জানান, এমনিতেই আবাসন খাত এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। এর মধ্যে নির্মাণসামগ্রীর দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এতে প্রতি বর্গফুটে অপ্রত্যাশিতভাবে নির্মাণ খরচ বেড়েছে। রড, সিমেন্ট, ইট, বালু থেকে শুরু করে সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে। বেড়ে গেছে শ্রমিকের মজুরিও। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। নতুন করে আবার নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় ফ্ল্যাটের দাম আরও বাড়াতে হবে। আবাসন খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সূত্র জানায়, মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে রডের দাম প্রতি টনে ৩৫ হাজার টাকা বেড়েছে। ২০২০ সালে এক টন রড কিনতে খরচ পড়তো ৬৪ হাজার টাকা, ২০২১ সালে সেটা ৭০ হাজার টাকা হয়। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে হয় ৯৪ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে রেকর্ড সৃষ্টি করে প্রতি টন এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। দাম বেড়ে যায় সিমেন্ট, বালু, পাথর, ইট, গ্রিল ও রেলিংয়ের, বেড়ে যায় লেবার খরচও। তবে ২০২৩ সালের শেষদিকে অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রড, বালু ও ইটের দাম কমে যায়। লাখ টাকার রডের দাম চলে আসে ৯০ হাজার টাকায়। অনেক কোম্পানি এ সুযোগে নতুন নতুন প্রকল্পের জন্য রড, বালু ও ইট কেনা শুরু করে। আবাসন ব্যবসায়ীদের মনেও স্বস্তি বয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছিল এর ফলে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের দাম কিছুটা কমে আসবে। চলমান প্রকল্পের কাজও দ্রুত শেষ হবে। যদিও সেসব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যায় নির্বাচনের পরপরই। হঠাৎ দাম বেড়ে যায় রডের। এর পরপরই দাম বাড়তে শুরু করে বালু, ইট ও পাথরের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতারা জানান, কোম্পানি ও রডের মানভেদে দাম বেড়েছে চার থেকে আট হাজার টাকা। নির্বাচনের আগে যে রড প্রতি টন ৮৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল, সেটি এখন ৯০ হাজার টাকা হয়েছে। ৯০ হাজার টাকার প্রতি টন রড এখন ৯৫ থেকে ৯৬ হাজার টাকা হয়েছে। আর ৯৪ হাজার টাকার রড এখন আবারও লাখ টাকা বা তার কাছাকাছি হয়েছে। এদিকে রডের পাশাপাশি দাম বাড়ছে সিমেন্টেরও। সিমেন্টের কাঁচামালও আমদানি নির্ভর হওয়ায় ডলার সংকটের প্রভাব পড়ছে দেশের সিমেন্ট শিল্পেও। দাম বাড়ার কারণে চাহিদা কমছে সিমেন্টের, অপরদিকে চাহিদা কম থাকায় মিলগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বস্তাপ্রতি গড় উৎপাদন খরচ বাড়ছে সিমেন্ট কারখানাগুলোর। এতে লোকসানের সম্মুখীন হওয়ার দাবি জানান সিমেন্ট উৎপাদকরা। বর্তমানে কোম্পানিভেদে ৫০ কেজির সিমেন্টের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫৪০ থেকে ৫৭০ টাকার মধ্যে। বাজার সূত্রে জানা যায়, সিমেন্টের দামও নির্বাচনের আগে ব্র্যান্ডভেদে বস্তাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছিল। নির্বাচনের পরপরই তা বেড়ে এখন বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধির পেছনেও কাঁচামাল আমদানি সংকটকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে রড-সিমেন্টের মতোই বালু, পাথর, গ্রিল, রেলিং ও লেবার খরচের দামেরও পার্থক্য দেখা গেছে নির্বাচনের আগে-পরে। বিক্রেতারা বলছেন, নির্বাচনের পরপরই ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে প্রতি ফুট এলসি পাথর ২১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে পাইলিংয়ের পাথর বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা পর্যন্ত। ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে লালবালু প্রতি সিএফটি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে সাদাবালু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, সাদা লোকাল বালু ১৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভরাট বালুর দামও বেড়েছে। প্রায় দুই টাকা দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা সিএফটি। তবে ইটের দাম বাড়ার পেছনে বৈরী আবহাওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইট শুকানোয় সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনেক এলাকায় রোদের দেখা নেই প্রায় দেড় থেকে দুই সপ্তাহ। এতে ইট শুকাতে না পারায় অর্ধেকে নেমেছে উৎপাদন। যার প্রভাব পড়েছে দামে। এখন এক নম্বর প্রতি হাজার ইট বিক্রি হচ্ছে ১৩ হাজার টাকায়, মাস খানেক আগেও যেটা ১১ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই নম্বর (মানভেদে) ইট ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। দাম বেড়েছে খোয়ার। প্রতি সিএফটি খোয়া বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, আর পুরোনো ইটের খোয়া বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশ বলছে, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে এই খাতে। কারণ সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নির্ভর। এ কারণে দাম বাড়তির দিকে। রড সিমেন্টের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ডলারের দাম বাড়ার কারণে রড সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়াকেই দায়ী বলে করে দেশের আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব। সংগঠনটির সভাপতি শামসুল আলামিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ধাপে বেড়ে গেছে কনস্ট্রাকশন ম্যাটেরিয়ালের দাম। একবার দাম বেড়েছিলো ইউক্রেন যুদ্ধের সময়। সে সময় তেলের দাম বাড়ার কারণে, জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়ে গিয়েছিল। তার পর ডলারের দাম হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করার কারণে তার প্রভাবও সরাসরি আমাদের খাতে পড়ে। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গেছে। এদিকে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে আবাসন খাতের ফ্ল্যাটের দামও বেড়ে গেছে স্বীকার করে এর প্রভাবে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে মন্দাভাব বিরাজ করছে বলে জানান তিনি। আবাসনখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ভবন নির্মাণ সামগ্রীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান হচ্ছে রড ও সিমেন্ট। রড ও সিমেন্টের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। রড সিমেন্টের দাম বাড়ার সরাসরি প্রভাব পড়ছে এই খাতে। নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে গেছে। এর ফলে তা মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে বর্তমানে বাজারের গতি কমে এসেছে। এছাড়া নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির জেরে আবাসন ব্যবসায়ীরা চুক্তিপত্রে উল্লিখিত দামের মধ্যে ক্রেতাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও রিহ্যাব সূত্রে জানা যায়। এতে লোকসানের শিকার হতে হচ্ছে আবাসন ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে ডেভেলপারদের সঙ্গে ক্রেতাদের ঝামেলার সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ সাধারণত একটি মূল্য নির্ধারণ করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রির পরই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন ডেভেলপাররা। কিন্তু চুক্তির পর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পূর্বের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্মাণসামগ্রীর দাম আরও বেড়েছে, বিরূপ প্রভাব পড়ছে আবাসন খাতে

আপডেট টাইম : ০৩:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৪

দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশের সমগ্র অর্থনীতিতে। বিশেষ করে পণ্য আমদানিতে ডলার সংকটের প্রভাব ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বাড়িয়েছে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। অনেক ব্যাংক নতুন করে এলসি খুলতেও পারছে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে দেশে এক ধরনের অনিশ্চয়তার দোলাচল ছিল। তবে সব শঙ্কা কাটিয়ে বড় ধরনের ঝামেলা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন। নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও সুবাতাস বয়ে যায় দেশের আবাসন খাতে। বেশ কম ছিল নির্মাণসামগ্রীর দাম। নির্মাণের মূল উপকরণ রডের দাম প্রতি টনে আট থেকে ১০ হাজার টাকা কমে যায়, যা রেকর্ড লাখ টাকা ছাড়িয়েছিল। কমে আসে ইট, বালু ও পাথরের দামও। যদিও নির্মাণখাতের এই সুসময় বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নির্বাচন যেতে না যেতে উল্টে গেছে চিত্র। আবারও বাড়তে শুরু করেছে নির্মাণ উপকরণের দাম। ফলে গভীর সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের আবাসন খাত। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ঢাকায় ফ্ল্যাটের দাম আগে থেকেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণে আরেক দফা নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় মধ্যবিত্তের ফ্ল্যাট কেনা এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবাসন ব্যবসায়ীরা জানান, এমনিতেই আবাসন খাত এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। এর মধ্যে নির্মাণসামগ্রীর দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এতে প্রতি বর্গফুটে অপ্রত্যাশিতভাবে নির্মাণ খরচ বেড়েছে। রড, সিমেন্ট, ইট, বালু থেকে শুরু করে সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে। বেড়ে গেছে শ্রমিকের মজুরিও। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। নতুন করে আবার নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় ফ্ল্যাটের দাম আরও বাড়াতে হবে। আবাসন খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সূত্র জানায়, মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে রডের দাম প্রতি টনে ৩৫ হাজার টাকা বেড়েছে। ২০২০ সালে এক টন রড কিনতে খরচ পড়তো ৬৪ হাজার টাকা, ২০২১ সালে সেটা ৭০ হাজার টাকা হয়। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে হয় ৯৪ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে রেকর্ড সৃষ্টি করে প্রতি টন এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। দাম বেড়ে যায় সিমেন্ট, বালু, পাথর, ইট, গ্রিল ও রেলিংয়ের, বেড়ে যায় লেবার খরচও। তবে ২০২৩ সালের শেষদিকে অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রড, বালু ও ইটের দাম কমে যায়। লাখ টাকার রডের দাম চলে আসে ৯০ হাজার টাকায়। অনেক কোম্পানি এ সুযোগে নতুন নতুন প্রকল্পের জন্য রড, বালু ও ইট কেনা শুরু করে। আবাসন ব্যবসায়ীদের মনেও স্বস্তি বয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছিল এর ফলে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের দাম কিছুটা কমে আসবে। চলমান প্রকল্পের কাজও দ্রুত শেষ হবে। যদিও সেসব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যায় নির্বাচনের পরপরই। হঠাৎ দাম বেড়ে যায় রডের। এর পরপরই দাম বাড়তে শুরু করে বালু, ইট ও পাথরের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতারা জানান, কোম্পানি ও রডের মানভেদে দাম বেড়েছে চার থেকে আট হাজার টাকা। নির্বাচনের আগে যে রড প্রতি টন ৮৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল, সেটি এখন ৯০ হাজার টাকা হয়েছে। ৯০ হাজার টাকার প্রতি টন রড এখন ৯৫ থেকে ৯৬ হাজার টাকা হয়েছে। আর ৯৪ হাজার টাকার রড এখন আবারও লাখ টাকা বা তার কাছাকাছি হয়েছে। এদিকে রডের পাশাপাশি দাম বাড়ছে সিমেন্টেরও। সিমেন্টের কাঁচামালও আমদানি নির্ভর হওয়ায় ডলার সংকটের প্রভাব পড়ছে দেশের সিমেন্ট শিল্পেও। দাম বাড়ার কারণে চাহিদা কমছে সিমেন্টের, অপরদিকে চাহিদা কম থাকায় মিলগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বস্তাপ্রতি গড় উৎপাদন খরচ বাড়ছে সিমেন্ট কারখানাগুলোর। এতে লোকসানের সম্মুখীন হওয়ার দাবি জানান সিমেন্ট উৎপাদকরা। বর্তমানে কোম্পানিভেদে ৫০ কেজির সিমেন্টের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫৪০ থেকে ৫৭০ টাকার মধ্যে। বাজার সূত্রে জানা যায়, সিমেন্টের দামও নির্বাচনের আগে ব্র্যান্ডভেদে বস্তাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছিল। নির্বাচনের পরপরই তা বেড়ে এখন বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধির পেছনেও কাঁচামাল আমদানি সংকটকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে রড-সিমেন্টের মতোই বালু, পাথর, গ্রিল, রেলিং ও লেবার খরচের দামেরও পার্থক্য দেখা গেছে নির্বাচনের আগে-পরে। বিক্রেতারা বলছেন, নির্বাচনের পরপরই ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে প্রতি ফুট এলসি পাথর ২১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে পাইলিংয়ের পাথর বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা পর্যন্ত। ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে লালবালু প্রতি সিএফটি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে সাদাবালু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, সাদা লোকাল বালু ১৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভরাট বালুর দামও বেড়েছে। প্রায় দুই টাকা দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা সিএফটি। তবে ইটের দাম বাড়ার পেছনে বৈরী আবহাওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইট শুকানোয় সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনেক এলাকায় রোদের দেখা নেই প্রায় দেড় থেকে দুই সপ্তাহ। এতে ইট শুকাতে না পারায় অর্ধেকে নেমেছে উৎপাদন। যার প্রভাব পড়েছে দামে। এখন এক নম্বর প্রতি হাজার ইট বিক্রি হচ্ছে ১৩ হাজার টাকায়, মাস খানেক আগেও যেটা ১১ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই নম্বর (মানভেদে) ইট ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। দাম বেড়েছে খোয়ার। প্রতি সিএফটি খোয়া বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, আর পুরোনো ইটের খোয়া বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশ বলছে, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে এই খাতে। কারণ সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নির্ভর। এ কারণে দাম বাড়তির দিকে। রড সিমেন্টের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ডলারের দাম বাড়ার কারণে রড সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়াকেই দায়ী বলে করে দেশের আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব। সংগঠনটির সভাপতি শামসুল আলামিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ধাপে বেড়ে গেছে কনস্ট্রাকশন ম্যাটেরিয়ালের দাম। একবার দাম বেড়েছিলো ইউক্রেন যুদ্ধের সময়। সে সময় তেলের দাম বাড়ার কারণে, জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়ে গিয়েছিল। তার পর ডলারের দাম হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করার কারণে তার প্রভাবও সরাসরি আমাদের খাতে পড়ে। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গেছে। এদিকে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে আবাসন খাতের ফ্ল্যাটের দামও বেড়ে গেছে স্বীকার করে এর প্রভাবে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে মন্দাভাব বিরাজ করছে বলে জানান তিনি। আবাসনখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ভবন নির্মাণ সামগ্রীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান হচ্ছে রড ও সিমেন্ট। রড ও সিমেন্টের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। রড সিমেন্টের দাম বাড়ার সরাসরি প্রভাব পড়ছে এই খাতে। নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে গেছে। এর ফলে তা মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে বর্তমানে বাজারের গতি কমে এসেছে। এছাড়া নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির জেরে আবাসন ব্যবসায়ীরা চুক্তিপত্রে উল্লিখিত দামের মধ্যে ক্রেতাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও রিহ্যাব সূত্রে জানা যায়। এতে লোকসানের শিকার হতে হচ্ছে আবাসন ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে ডেভেলপারদের সঙ্গে ক্রেতাদের ঝামেলার সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ সাধারণত একটি মূল্য নির্ধারণ করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রির পরই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন ডেভেলপাররা। কিন্তু চুক্তির পর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পূর্বের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা।