ঢাকা , বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কমলাপুর স্টেশনের সক্ষমতার অভাব

বর্তমানে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রতিদিন ১৪৬টি ট্রেন চলাচল করে। অথচ ১৪৪টি ট্রেন চালনার সক্ষমতা রয়েছে এ স্টেশনের। এখন চাইলেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। এর ফলে ট্রেন আসা-যাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। এর সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে অপারেটিং কার্যক্রমে। তাই গেন্ডারিয়া স্টেশনকে টার্মিনাল স্টেশন করার প্রস্তাব দিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল।

ঢাকা স্টেশন থেকে প্রতি ২০ মিনিট পর একটি ট্রেন ছাড়ে। একই সময় আরেকটি ট্রেন স্টেশনে ঢুকে। সে হিসাবে দিনে ৭২টি ট্রেন ছাড়তে পারে এবং ৭২টি ট্রেন প্রবেশ করতে পারে। তার মানে ১৪৪টি ট্রেন পরিচালনার সক্ষমতা রয়েছে। বাস্তবে ১৪৬টি ট্রেন আসা-যাওয়া করে। বর্তমান অবস্থায় ঢাকা স্টেশনে ট্রেন বাড়ানোর সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় ঢাকা শহরে আরেকটি বিকল্প টার্মিনাল স্টেশন গড়ে তোলা জরুরি।

এই বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবির আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি এ ধরনের প্রস্তাব দেখিনি। বিকল্প টার্মিনাল বা স্টেশনের সক্ষমতা বাড়াতে কী বলা হয়েছে, তা দেখে পরে মন্তব্য করা সহজ হবে। এটুকু বলতে পারি, কমলাপুরে মাল্টিমোডাল হাব হবে। তখন ট্রেনের সক্ষমতা বাড়বে। এ ছাড়া টার্মিনাল স্টেশন বা বিকল্প স্টেশন করতে হলে হয়তো সময় লাগবে। তবে করা সম্ভব। আমরা চাই, রেলের সেবার মান বাড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে।’

জানা গেছে, পদ্মা রেলসেতু এবং বঙ্গবন্ধু রেলসেতু দুটিতে রেলপথের কাজ শেষ হলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকামুখী ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে। তা ছাড়া কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের কাজসহ অন্যান্য চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিপুলসংখ্যক ট্রেন পরিচালনা করতে হবে। তাই ঢাকার কমলাপুর স্টেশনের ট্রেন অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি গেন্ডারিয়া স্টেশনকে টার্মিনাল স্টেশন হিসাবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় গেন্ডারিয়া স্টেশনে ছয়টি লাইন করা হবে। গেন্ডারিয়া স্টেশন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে পুরাতন পরিত্যক্ত প্রস্তখোলা স্টেশনে (বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে) ওয়াশপিট এবং সিক লাইন করা গেলে গেন্ডারিয়া স্টেশনকে দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেনের টার্মিনাল স্টেশন হিসাবে গড়ে তোলা যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হাওড়া ও শিয়ালদহ পাশাপাশি দুটি টার্মিনাল স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে শত শত ট্রেন আসা-যাওয়া করে। সার্বিক বিবেচনায় দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য গেন্ডারিয়া স্টেশনকে একটি টার্মিনাল স্টেশন হিসেবে গড়ে তুলতে চিঠি দিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল।

এর আগে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনের ব্যাপারে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-তেজগাঁও স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থান মগবাজারে একটি ‘এ’ ক্লাস স্টেশন তৈরি করা হলে ঢাকা স্টেশন থেকে ১০ মিনিট পর পর ট্রেন ছাড়া যাবে। আর ‘এ’ ক্লাস স্টেশন করা না গেলে খিলগাঁও রেলগেট থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত রেললাইনের দুই পাশে ওয়াল নির্মাণ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তখন সেকশনের গতি ৬৫ কিলোমিটার করে ঢাকা স্টেশন থেকে ১০ মিনিট পর পর ট্রেন ছাড়া সম্ভব। বলা হয়েছে, ঢাকা স্টেশনটি ডেডএন্ড স্টেশন। এ কারণে একটি ট্রেন রেক ওয়াশপিটে পাঠানোর ক্ষেত্রে এর সব অপারেটিং কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে অন্যান্য ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়। তাই আখাউড়া বা ঈশ^রদী স্টেশনের মতো দুই দিক থেকে সান্টিংয়ের সুবিধা করা গেলে বিলম্বের হার কমবে। এ জন্য স্টেশনের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর এই সক্ষমতা বাড়াতে কমলাপুর স্টেশনের নিচতলা শুধু প্ল্যাটফরম এবং ট্রেন লাইন থাকবে। কোনো অফিস থাকবে না। অফিস থাকবে দোতলা বা তিনতলায়। তখন রেললাইন ও প্ল্যাটফরম বৃদ্ধি সম্ভব নিচতলায়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

কমলাপুর স্টেশনের সক্ষমতার অভাব

আপডেট টাইম : ০৬:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বর্তমানে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রতিদিন ১৪৬টি ট্রেন চলাচল করে। অথচ ১৪৪টি ট্রেন চালনার সক্ষমতা রয়েছে এ স্টেশনের। এখন চাইলেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। এর ফলে ট্রেন আসা-যাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। এর সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে অপারেটিং কার্যক্রমে। তাই গেন্ডারিয়া স্টেশনকে টার্মিনাল স্টেশন করার প্রস্তাব দিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল।

ঢাকা স্টেশন থেকে প্রতি ২০ মিনিট পর একটি ট্রেন ছাড়ে। একই সময় আরেকটি ট্রেন স্টেশনে ঢুকে। সে হিসাবে দিনে ৭২টি ট্রেন ছাড়তে পারে এবং ৭২টি ট্রেন প্রবেশ করতে পারে। তার মানে ১৪৪টি ট্রেন পরিচালনার সক্ষমতা রয়েছে। বাস্তবে ১৪৬টি ট্রেন আসা-যাওয়া করে। বর্তমান অবস্থায় ঢাকা স্টেশনে ট্রেন বাড়ানোর সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় ঢাকা শহরে আরেকটি বিকল্প টার্মিনাল স্টেশন গড়ে তোলা জরুরি।

এই বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবির আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি এ ধরনের প্রস্তাব দেখিনি। বিকল্প টার্মিনাল বা স্টেশনের সক্ষমতা বাড়াতে কী বলা হয়েছে, তা দেখে পরে মন্তব্য করা সহজ হবে। এটুকু বলতে পারি, কমলাপুরে মাল্টিমোডাল হাব হবে। তখন ট্রেনের সক্ষমতা বাড়বে। এ ছাড়া টার্মিনাল স্টেশন বা বিকল্প স্টেশন করতে হলে হয়তো সময় লাগবে। তবে করা সম্ভব। আমরা চাই, রেলের সেবার মান বাড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে।’

জানা গেছে, পদ্মা রেলসেতু এবং বঙ্গবন্ধু রেলসেতু দুটিতে রেলপথের কাজ শেষ হলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকামুখী ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে। তা ছাড়া কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের কাজসহ অন্যান্য চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিপুলসংখ্যক ট্রেন পরিচালনা করতে হবে। তাই ঢাকার কমলাপুর স্টেশনের ট্রেন অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি গেন্ডারিয়া স্টেশনকে টার্মিনাল স্টেশন হিসাবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় গেন্ডারিয়া স্টেশনে ছয়টি লাইন করা হবে। গেন্ডারিয়া স্টেশন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে পুরাতন পরিত্যক্ত প্রস্তখোলা স্টেশনে (বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে) ওয়াশপিট এবং সিক লাইন করা গেলে গেন্ডারিয়া স্টেশনকে দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেনের টার্মিনাল স্টেশন হিসাবে গড়ে তোলা যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হাওড়া ও শিয়ালদহ পাশাপাশি দুটি টার্মিনাল স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে শত শত ট্রেন আসা-যাওয়া করে। সার্বিক বিবেচনায় দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য গেন্ডারিয়া স্টেশনকে একটি টার্মিনাল স্টেশন হিসেবে গড়ে তুলতে চিঠি দিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল।

এর আগে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনের ব্যাপারে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-তেজগাঁও স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থান মগবাজারে একটি ‘এ’ ক্লাস স্টেশন তৈরি করা হলে ঢাকা স্টেশন থেকে ১০ মিনিট পর পর ট্রেন ছাড়া যাবে। আর ‘এ’ ক্লাস স্টেশন করা না গেলে খিলগাঁও রেলগেট থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত রেললাইনের দুই পাশে ওয়াল নির্মাণ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তখন সেকশনের গতি ৬৫ কিলোমিটার করে ঢাকা স্টেশন থেকে ১০ মিনিট পর পর ট্রেন ছাড়া সম্ভব। বলা হয়েছে, ঢাকা স্টেশনটি ডেডএন্ড স্টেশন। এ কারণে একটি ট্রেন রেক ওয়াশপিটে পাঠানোর ক্ষেত্রে এর সব অপারেটিং কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে অন্যান্য ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়। তাই আখাউড়া বা ঈশ^রদী স্টেশনের মতো দুই দিক থেকে সান্টিংয়ের সুবিধা করা গেলে বিলম্বের হার কমবে। এ জন্য স্টেশনের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর এই সক্ষমতা বাড়াতে কমলাপুর স্টেশনের নিচতলা শুধু প্ল্যাটফরম এবং ট্রেন লাইন থাকবে। কোনো অফিস থাকবে না। অফিস থাকবে দোতলা বা তিনতলায়। তখন রেললাইন ও প্ল্যাটফরম বৃদ্ধি সম্ভব নিচতলায়।