ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বায়ুদূষণের প্রধান কারণ ইটভাটা

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ রাজধানী ঢাকায় এমনিতেই বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি; তদুপরি শীতকালে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বায়ুদূষণ আরও বেশি হয়। বায়ুদূষণের কারণে আমরা কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছি তা হয়তো অনেকে সেভাবে ভেবে দেখি না। অথচ বাস্তবতা হল, বিপজ্জনক মাত্রায় বায়ুদূষণের কারণে মানুষ নানারকম রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, এমনকি ফুসফুস ক্যানসারসহ বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।

এ ছাড়া নিঃশ্বাসের সঙ্গে ক্ষতিকর ধাতব পদার্থ শরীরে প্রবেশ করায় স্নায়ুজনিত অসুখ, মস্তিস্কের রোগ ও হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। আরও উদ্বেগজনক হল, বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শিশুরা। আমাদের জন্য আরও একটি খারাপ তথ্য রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রথমদিকে।

বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদান হচ্ছে পিএম ২.৫। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার বায়ুতে এর মাত্রা বেড়েই চলেছে। ফলে এ শহর সাধারণ মানুষের বসবাসের জন্য সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ছে। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে দেশে বছরে ১ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়।

সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার বাতাসে দূষণ বৃদ্ধি পায় অন্তত চার গুণ। করোনা আমাদের একদিক থেকে কিছুটা উপকার করেছে। আগে বায়ুদূষণ থেকে রক্ষার জন্য কেউ সেভাবে মাস্ক ব্যবহার করত না। করোনা সংক্রমণ রোধে এখন অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছে।

বায়ুদূষণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট একটি কারণ দায়ী নয়। ঢাকার বাতাসে ভারি ধাতুর উপস্থিতির অন্যতম প্রধান কারণ ঢাকার আশপাশে অপরিকল্পিত ইটের ভাটাগুলো। জনবসতির কাছাকাছি ইটভাটা না থাকার আইন থাকলেও বাস্তবতা হল তা মানা হচ্ছে না। বর্তমানে ঢাকার চারপাশে হাজার খানেক ইটভাটা রয়েছে।

এক জরিপে প্রকাশ, ঢাকার বাতাসে অসহনীয় মাত্রায় ধাতুর উপস্থিতির জন্য অপরিকল্পিত ইটের ভাটা ৫৮ শতাংশ দায়ী। এ ছাড়া রয়েছে আরও কিছু কারণ। এর একটি হল শহরজুড়ে প্রায় সারা বছর কারণে-অকারণে খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ। সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতাই এ জন্য বহুলাংশে দায়ী। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশকে প্রতিনিয়ত দূষিত করছে।

মানবসৃষ্ট এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা। রাজধানীর বাতাসকে বিষমুক্ত করতে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব নির্মাণ ও স্থাপনাসহ অন্যান্য বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু বায়ুদূষণের জন্য প্রধানত মানুষ দায়ী, তাই এর প্রতিকারও রয়েছে মানুষের হাতেই। সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিলে সহজেই বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

এর জন্য সবার আগে কিছু বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের ইটভাটাগুলো শহর থেকে দূরে সরিয়ে নিতে হবে। এখন উন্নত অনেক দেশে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বায়ুদূষণ ছাড়াই তৈরি করা হচ্ছে ইট। আমাদের দেশেও এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইট তৈরি করা হলে বায়ুদূষণ অনেকাংশে কমে আসবে। প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব প্রিয় এ শহরকে দূষণমুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখা এবং অন্যদেরও এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বায়ুদূষণের প্রধান কারণ ইটভাটা

আপডেট টাইম : ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ রাজধানী ঢাকায় এমনিতেই বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি; তদুপরি শীতকালে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বায়ুদূষণ আরও বেশি হয়। বায়ুদূষণের কারণে আমরা কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছি তা হয়তো অনেকে সেভাবে ভেবে দেখি না। অথচ বাস্তবতা হল, বিপজ্জনক মাত্রায় বায়ুদূষণের কারণে মানুষ নানারকম রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, এমনকি ফুসফুস ক্যানসারসহ বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।

এ ছাড়া নিঃশ্বাসের সঙ্গে ক্ষতিকর ধাতব পদার্থ শরীরে প্রবেশ করায় স্নায়ুজনিত অসুখ, মস্তিস্কের রোগ ও হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। আরও উদ্বেগজনক হল, বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শিশুরা। আমাদের জন্য আরও একটি খারাপ তথ্য রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রথমদিকে।

বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদান হচ্ছে পিএম ২.৫। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার বায়ুতে এর মাত্রা বেড়েই চলেছে। ফলে এ শহর সাধারণ মানুষের বসবাসের জন্য সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ছে। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে দেশে বছরে ১ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়।

সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার বাতাসে দূষণ বৃদ্ধি পায় অন্তত চার গুণ। করোনা আমাদের একদিক থেকে কিছুটা উপকার করেছে। আগে বায়ুদূষণ থেকে রক্ষার জন্য কেউ সেভাবে মাস্ক ব্যবহার করত না। করোনা সংক্রমণ রোধে এখন অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছে।

বায়ুদূষণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট একটি কারণ দায়ী নয়। ঢাকার বাতাসে ভারি ধাতুর উপস্থিতির অন্যতম প্রধান কারণ ঢাকার আশপাশে অপরিকল্পিত ইটের ভাটাগুলো। জনবসতির কাছাকাছি ইটভাটা না থাকার আইন থাকলেও বাস্তবতা হল তা মানা হচ্ছে না। বর্তমানে ঢাকার চারপাশে হাজার খানেক ইটভাটা রয়েছে।

এক জরিপে প্রকাশ, ঢাকার বাতাসে অসহনীয় মাত্রায় ধাতুর উপস্থিতির জন্য অপরিকল্পিত ইটের ভাটা ৫৮ শতাংশ দায়ী। এ ছাড়া রয়েছে আরও কিছু কারণ। এর একটি হল শহরজুড়ে প্রায় সারা বছর কারণে-অকারণে খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ। সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতাই এ জন্য বহুলাংশে দায়ী। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশকে প্রতিনিয়ত দূষিত করছে।

মানবসৃষ্ট এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা। রাজধানীর বাতাসকে বিষমুক্ত করতে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব নির্মাণ ও স্থাপনাসহ অন্যান্য বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু বায়ুদূষণের জন্য প্রধানত মানুষ দায়ী, তাই এর প্রতিকারও রয়েছে মানুষের হাতেই। সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিলে সহজেই বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

এর জন্য সবার আগে কিছু বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের ইটভাটাগুলো শহর থেকে দূরে সরিয়ে নিতে হবে। এখন উন্নত অনেক দেশে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বায়ুদূষণ ছাড়াই তৈরি করা হচ্ছে ইট। আমাদের দেশেও এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইট তৈরি করা হলে বায়ুদূষণ অনেকাংশে কমে আসবে। প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব প্রিয় এ শহরকে দূষণমুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখা এবং অন্যদেরও এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা।