ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্মরণ মিছিলের একজন আজ নেই

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আজ ২ জানুয়ারি জনদরদি রাজনীতিক, সমাজসেবক, অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান এবং টেলিভিশন টকশোর তুখোড় বক্তা অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছর এইদিনে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর আগে তিনদিন তিনি কোমায় ছিলেন। নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে এই প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিকের জীবনাবসান ঘটে।

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে দুই মেয়াদে তিনি এমপি ছিলেন। সংসদে যাওয়ার আগে তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম মহিলা প্রসিকিউটর এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। এছাড়াও অটিস্টিক শিশুদের বিভিন্ন সংগঠনসহ মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এবং রাইটার্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ট্রেজারারসহ বহু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

মেধাবী ছাত্রী ছিলেন বাপ্পি। বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছিলেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে প্রথম পুরস্কার পেতেন। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাতেও প্রথম হয়েছিলেন এবং জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের সঙ্গে সাফল্য অর্জন করেন।

শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামসুন্নাহার হলে সূর্যাস্ত আইনবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এজন্য সন্ত্রাসীরা তাকে শারীরিকভাবে হামলা ও নির্যাতন করে। কিন্তু কোনো অত্যাচার ও নির্যাতনই তাকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। স্বৈরতন্ত্র ও নিপীড়ন-নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সংসদ অভিমুখী বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে তাকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে রাপা প্লাজার পাশের ড্রেনে ফেলে রাখা হয় এবং তাকে উদ্ধার করতে বাধা দেয়া হয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে তাকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সংসদে ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পির ভাষণগুলো ছিল হৃদয়স্পর্শী। একবার সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনাকে অশিষ্ট ভাষায় আক্রমণ করা হলে ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি এর প্রতিবাদে জ্বলে ওঠেন। সেদিন তার ভাষণ নিজদলীয় সংসদ সদস্যদের মুখ রক্ষা করেছিল। জাতীয় সংসদে বাপ্পিই প্রথম বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

মাত্র ৪৯ বছরের জীবনে তার অর্জনের ভান্ডার পরিপূর্ণ হলেও তিনি কখনও সেদিকে তাকাননি। অবিরাম কাজ করে গেছেন। অনাথ, এতিম ও অসহায় শিক্ষার্থীদের তিনি দু’হাত উজাড় করে দান করতেন। রুচিশীল মনন-মেধায় পরিপূর্ণ করে রেখেছিলেন জীবন।

তিনি ভারত, ভিয়েতনাম, ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি ও কানাডাসহ বহু দেশ সফর করেছেন। ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি দেশে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন।

২ জানুয়ারি ২০২০ দেশের সব ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং ৩ জানুয়ারি সব প্রিন্ট মিডিয়া তার মৃত্যুর খবর অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার ও প্রকাশ করে। আজ ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করছি। সেই সঙ্গে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি তার প্রতি। প্রার্থনা করছি, তিনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। পরম করুণাময় তাকে জান্নাত দান করুন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

স্মরণ মিছিলের একজন আজ নেই

আপডেট টাইম : ০৪:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ জানুয়ারী ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আজ ২ জানুয়ারি জনদরদি রাজনীতিক, সমাজসেবক, অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান এবং টেলিভিশন টকশোর তুখোড় বক্তা অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছর এইদিনে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর আগে তিনদিন তিনি কোমায় ছিলেন। নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে এই প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিকের জীবনাবসান ঘটে।

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে দুই মেয়াদে তিনি এমপি ছিলেন। সংসদে যাওয়ার আগে তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম মহিলা প্রসিকিউটর এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। এছাড়াও অটিস্টিক শিশুদের বিভিন্ন সংগঠনসহ মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এবং রাইটার্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ট্রেজারারসহ বহু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

মেধাবী ছাত্রী ছিলেন বাপ্পি। বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছিলেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে প্রথম পুরস্কার পেতেন। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাতেও প্রথম হয়েছিলেন এবং জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের সঙ্গে সাফল্য অর্জন করেন।

শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামসুন্নাহার হলে সূর্যাস্ত আইনবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এজন্য সন্ত্রাসীরা তাকে শারীরিকভাবে হামলা ও নির্যাতন করে। কিন্তু কোনো অত্যাচার ও নির্যাতনই তাকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। স্বৈরতন্ত্র ও নিপীড়ন-নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সংসদ অভিমুখী বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে তাকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে রাপা প্লাজার পাশের ড্রেনে ফেলে রাখা হয় এবং তাকে উদ্ধার করতে বাধা দেয়া হয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে তাকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সংসদে ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পির ভাষণগুলো ছিল হৃদয়স্পর্শী। একবার সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনাকে অশিষ্ট ভাষায় আক্রমণ করা হলে ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি এর প্রতিবাদে জ্বলে ওঠেন। সেদিন তার ভাষণ নিজদলীয় সংসদ সদস্যদের মুখ রক্ষা করেছিল। জাতীয় সংসদে বাপ্পিই প্রথম বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

মাত্র ৪৯ বছরের জীবনে তার অর্জনের ভান্ডার পরিপূর্ণ হলেও তিনি কখনও সেদিকে তাকাননি। অবিরাম কাজ করে গেছেন। অনাথ, এতিম ও অসহায় শিক্ষার্থীদের তিনি দু’হাত উজাড় করে দান করতেন। রুচিশীল মনন-মেধায় পরিপূর্ণ করে রেখেছিলেন জীবন।

তিনি ভারত, ভিয়েতনাম, ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি ও কানাডাসহ বহু দেশ সফর করেছেন। ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি দেশে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন।

২ জানুয়ারি ২০২০ দেশের সব ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং ৩ জানুয়ারি সব প্রিন্ট মিডিয়া তার মৃত্যুর খবর অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার ও প্রকাশ করে। আজ ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করছি। সেই সঙ্গে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি তার প্রতি। প্রার্থনা করছি, তিনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। পরম করুণাময় তাকে জান্নাত দান করুন।