বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ দেশে ট্রেন দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে লেভেল ক্রসিংগুলো। প্রায় প্রতিবছরই লেভেল ক্রসিংয়ে এক বা একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। গত ১৩ বছরে রেল দুর্ঘটনায় ২৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সেদিনও, গত বছর ১৯ ডিসেম্বর, জয়পুরহাটে লেভেল ক্রসিং দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২ জন।
লেভেল ক্রসিংয়ে ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। এবার খোদ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে বিষয়টি। এতে বলা হয়েছে, সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা ৮৪ শতাংশ লেভেল ক্রসিংই অরক্ষিত। আর মোট ক্রসিংয়ের প্রায় অর্ধৈক অবৈধ, যার সংখ্যা ১ হাজার ১৪৯।
বস্তুত অরক্ষিত ও অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের কারণেই ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটছে। অর্থাৎ, এ ক্রসিংগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকির কারণগুলো দূর না করা পর্যন্ত লেভেল ক্রসিং দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
রোববার এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় ঝুঁকিপূর্ণ ক্রসিংগুলোর দুই পাশে (সড়কে) দ্রুত স্পিড ব্রেকার স্থাপনসহ সংশ্লিষ্টদের কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রেললাইন ঘিরে থাকা সড়কে আন্ডারপাস বা ওভারপাস নির্মাণ, লেভেল ক্রসিং গেটের সংখ্যা যথাসম্ভব কমানো, এলজিইডিসহ বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক অবৈধ ও চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে নির্মিত লেভেল ক্রসিংগুলোয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনা বা প্রস্তাবগুলো যে ভালো এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রশ্ন রয়েছে এগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে। আমরা দেখেছি, প্রতিটি রেল দুর্ঘটনার পর এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী নেওয়া হয় না কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
অভিযোগ আছে, এ নিয়েও চলে অবৈধ বাণিজ্য। কমিটি যাদের দায়ী করে তাদের অনেকে ঊর্ধ্বতন অসাধু কর্মকর্তার কাছে ছুটে গিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে শাস্তি কমিয়ে আনেন। আরও অভিযোগ আছে, রেলের নিজস্ব লোকজন দিয়েই অধিকাংশ সময় গঠন করা হয় কমিটি, যাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে অন্যদের কাঁধে দায় চাপানো যায়। এ পরিস্থিতি বজায় রেখে রেল দুর্ঘটনা কমার আশা করা অর্থহীন।
রেল দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে হলে সবার আগে এর কারণগুলো দূর করতে হবে। সে ক্ষেত্রে লেভেল ক্রসিংগুলোকে করতে হবে ঝুঁকিমুক্ত। রেলকে তুলনামূলক নিরাপদ বাহন হিসেবে গণ্য করা হয়।
কিন্তু ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে রেল ভ্রমণে মানুষের সেই নিরাপত্তাবোধে চির ধরবে। কাজেই দুর্ঘটনার কারণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।