বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর তত্পরতার কারণে জঙ্গিরা কিছুটা দুর্বল হলেও তারা একেবারে হারিয়ে যায়নি। ভেতরে ভেতরে তারা সাংগঠনিক তত্পরতা ও নাশকতার ছক আঁটছে। তারই প্রমাণ গত দুই দিনে দুটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান। টাঙ্গাইলের কালিহাতীর একটি বাড়িতে প্রথম আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর র্যাব-১২-র সদস্যরা সোমবার সন্ধ্যায় অভিযান শুরু করেন। গভীর রাতে সেখান থেকে দুই ভাইকে আটক করা হয়। তাদের নব্য জেএমবির সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাড়িটি থেকে নাশকতার উদ্দেশ্যে তৈরি একটি ড্রোন উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া চায়নিজ কুড়াল, চাপাতি, ছুরিসহ বেশ কিছু দেশি অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। আটক দুজনের তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাতেই রাজধানীর মিরপুর মাজার রোডের একটি বাড়িতে থাকা দ্বিতীয় আস্তানাটি ঘিরে ফেলা হয়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ি থেকে তিনটি বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বাড়ির পাঁচতলায় আবদুল্লাহ নামে এক জঙ্গি নেতাসহ মোট সাতজন অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার আবদুল্লাহর বোন র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করলেও অন্যরা বিকেল পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেনি। এর আগেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের বেশ কিছু জঙ্গি আস্তানা খুঁজে পাওয়া যায়। গত মাসে রাজধানীর পান্থপথে অভিযানের সময় এক জঙ্গির আত্মঘাতী বিস্ফোরণে একটি হোটেলের দেয়াল উড়ে গেছে। জানা যায়, সেই জঙ্গি জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা নিয়েই সেখানে অবস্থান করছিল। তাই জঙ্গি তত্পরতা শেষ হয়ে গেছে কিংবা বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটবে না—এমন ভাবার সুযোগ নেই।
এক দশক ধরে ইসলামের নামে জঙ্গিদের উত্থান সারা বিশ্বেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলামিক স্টেট, আল-কায়েদা, হুজি, তালেবান ইত্যাদি নামে তারা একের পর এক নাশকতার ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। তাদের এসব হামলার শিকার হচ্ছে মূলত নিরীহ মানুষ। বাংলাদেশেও তারা হুজি, জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম—এমন সব নামে তত্পরতা চালাচ্ছে। তাদের হামলায় বহু নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও অনেকে প্রাণ হারিয়েছে। বর্তমানে জঙ্গিদের তত্পরতা কমলেও তাদের অনেকেই নানা জায়গায় ঘাপটি মেরে রয়েছে। সময়-সুযোগ পেলেই তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই তাদের নির্মূলের লক্ষ্যে আরো বেশি তত্পর হতে হবে। তাদের মদদদাতা, অর্থদাতা, অস্ত্রদাতা ও পৃষ্ঠপোষকতাকারীদেরও খুঁজে বের করতে হবে। তা না হলে আরো অনেক তরুণ-কিশোরকে ভুল বুঝিয়ে এই বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যাওয়া হবে। নতুন করে তাদের শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করতে থাকবে।
টাঙ্গাইলের ঘটনায় তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতার যে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা খুবই আশঙ্কার কারণ। এখনই এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে আমাদের হয়তো আরো ভয়ংকর পরিণতি দেখতে হতে পারে। ড্রোন দিয়ে বা দূর-নিয়ন্ত্রিত খেলনা বিমান ও যানবাহন দিয়ে তারা অনেক স্পর্শকাতর জায়গায়ও বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে। এ জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দক্ষতা ও সামর্থ্য বাড়াতে হবে। জঙ্গি দমনে জনগণকে আরো বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে।