বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সেনা অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে বিগত প্রায় দুই সপ্তাহে সোয়া লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ধারণা করছে, আরো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। চার দশক ধরেই বাংলাদেশ লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভরণ-পোষণের ভার বহন করছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের নিরাপত্তাজনিত হুমকি বাড়ছে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় সামাজিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা স্থানীয় সমাজে মিশে যাচ্ছে, ভোটার তালিকায় চলে আসছে, এমনকি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ অবস্থা আর দীর্ঘায়িত হতে দেওয়া যায় না। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নিয়ে তাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে হবে। এ জন্য যত ধরনের কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন তা নিতে হবে।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক নৃশংসতা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিউ গুতেরেস রোহিঙ্গাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করার এবং তাদের নাগরিকত্ব অথবা অবাধে চলাচলের অধিকার, নিরাপত্তা ও সহায়তা প্রদানের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মহাসচিব ও বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহিংসতাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। গত মঙ্গলবার তিনি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিকে টেলিফোন করে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা বন্ধ না হলে তা ভয়াবহ মানবিক সংকটে রূপ নেবে এবং বিষয়টি তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে উত্থাপন করবেন। মালদ্বীপ এরই মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করেছে। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি গত সোমবার সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই সংকট সমাধানে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ সফরে এসে রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। অনেক দেশেই সাধারণ মানুষ এই বর্বরতার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও বিষয়টিতে যথেষ্ট সোচ্চার হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব জনমতকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে। জাতিসংঘ, ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দক্ষতার সঙ্গে বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। ঢাকায় ওআইসিভুক্ত মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের একটি শীর্ষ সম্মেলনও আয়োজন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতেও যেতে হবে এবং মিয়ানমারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে যা করছে, তাকে কোনো সভ্য দেশের আচরণ বলা যায় না। সেখানে যে ধরনের নৃশংসতা চালানো হচ্ছে তাকে অনেকেই গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশ্ব মানবতার জন্যও তা এক চরম আঘাত। আমরা আশা করি, বিশ্ব নেতারা দ্রুততম সময়ে মিয়ানমারকে বাধ্য করবেন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই নৃশংসতা বন্ধ করতে এবং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে স্বীকৃত নাগরিক হিসেবে ফেরার অধিকার দিতে।