বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সেই হিসাবে বলা যায়, নির্বাচনের বছরখানেক বাকি রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো জনমত গঠন, প্রার্থী নির্বাচন ও দল গোছানোর মতো কার্যক্রম অনেক আগেই শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এরই মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কাল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা হলেই এই দফা সংলাপ প্রক্রিয়া শেষ হবে। এর আগে গত রবিবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে সংলাপে বসেছিল ইসি। এ সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বিএনপি ২০ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে। আড়াই ঘণ্টার সংলাপ শেষে কিছু সীমাবদ্ধতার কথা বলা হলেও বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়া ছিল যথেষ্ট ইতিবাচক। আগের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলটির নেতারা। মানুষও ক্রমে আশাবাদী হয়ে উঠছে যে আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকবে এবং সবাই নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসতে থাকে ততই যেন মানুষের দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা বাড়তে থাকে। আন্দোলন, হরতাল, হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ—দীর্ঘদিন ধরে এসবই যেন নির্বাচন-পূর্ব সময়ের চিত্র হয়ে উঠেছিল। সেই তুলনায় এবার দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ অনেক ভালো। আশা করা যায়, নির্বাচনের আগেও পরিবেশ শান্তিপূর্ণই থাকবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, সরকার, বিরোধী দল—সবাইকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যেসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোকে শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। এসব আলোচনায় নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য ভালো ভালো প্রস্তাব উঠে এসেছে। সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আবার এমন অনেক প্রস্তাব এসেছে যেগুলো সম্পর্কে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে পড়ে না। কিছু প্রস্তাব আছে যেগুলোর বিষয়ে শুধু সরকারই পদক্ষেপ নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবগুলো বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে দিতে পারে। সরকারও বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে এবং তাদের যুক্তিসংগত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে। অন্যান্য সময়ের মতো রাষ্ট্রপতিও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন। মোট কথা, আগামী নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এখন থেকেই উদ্যোগী হতে হবে এবং আন্তরিকতা প্রদর্শন করতে হবে।
বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল অংশ না নিয়ে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছিল। তাতে প্রচুর সংঘাত হয়েছে এবং অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। নির্বাচিত সংসদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আমরা চাই না, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তেমন পরিস্থিতি বিরাজ করুক। আগামী নির্বাচন প্রতিনিধিত্বশীল, অবাধ ও সুষ্ঠু হোক এবং তার মধ্য দিয়ে দেশে স্থিতিশীল রাজনীতি নিশ্চিত হোক ও দেশের সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হোক—এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।