ঢাকা , রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে : আসাদুল হক

স্বপেন সূচনা:
১৯০৫ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে বঙ্গ প্রদেশ ভাগ করে পূর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করা হলে ভারতের পশ্চাৎপদ এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আশা-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। এ সময় কলকাতা-কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী ও হিন্দু রাজনৈতিক নেতারা একে ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র বলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন, এই মতের পক্ষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত অবস্থান নেন। ফলে ঢাকা-কেন্দ্রিক নতুন প্রদেশের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে ভারতকে ধর্মভিত্তিক দুই রাষ্ট্র সৃষ্টির আন্দোলনের ফলে ভারতীয় অধিকাংশ রাজনীতিকবৃন্দ হিন্দু ও মুসলমানে বিভাজিত হয়ে যান। ফলে ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। দেশ বিভাগের কূটচালে সবচেয়ে বঞ্চিত হয় পূর্ব বাংলার মানুষ। সমৃদ্ধশালী কলকাতা ভাগ করে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে দেয়ার বিষয়টি নির্দিষ্ট হলেও, পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের নেতাদের উদাসিনতার কারণে কলকাতাও ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসু অবিভক্ত বাংলা নিয়ে সংযুক্ত বাংলা প্রজাতন্ত্রের দাবি তুললে, কায়েমি স্বার্থবাদীরা এই প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয়। ভগ্ন হৃদয়ে মুসলিম লীগের প্রগতিশীল ছাত্র-যুব নেতারা ঢাকায় ফিরে আসেন। পূর্ব বাংলা তখন একটি বৃহৎ গ্রাম ছাড়া আর কোনো অর্থনৈতিক সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব ছিল না। এই আশা ভঙ্গের ক্ষোভকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে পূর্ব বাংলার মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির প্রত্যয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ।

পরিবর্তনের নতুন ধারা:
সাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে আধুনিক যুগের সাথে তাল মেলানো সম্ভব নয়, এ বাস্তবতা দলের প্রথমসারির নেতারা ভালো করেই বুঝতেন। তবে ধর্মের আবেগে যে-দেশের জন্ম হলো, তাতে আঘাত করলে বুমেরাং হতে পারে। এ কারণে আওয়ামী লীগ নামের সাথে মুসলিম শব্দটি রাখা হয়েছিল।’৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলের নেতৃবৃন্দ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। এর ওপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কেন্দ্র ও প্রদেশে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার প্রয়াসে ও সেনাবাহিনী কর্তৃক পাকিস্তানের ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হলে, আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার মানুষকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করার রণকৌশল গ্রহণ করে।

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক নীতি ও এই অঞ্চলের মানুষকে সন্দেহের চোখে দেখার কারণে, আওয়ামী লীগের প্রতি পূর্ব বাংলার মানুষের আগ্রহ দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৬৬ সালে পুনর্গঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬-দফা ঘোষণা করলে পাকিস্তানি শাসকরা আওয়ামী লীগের ওপর দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের ধারণা জন্মে একমাত্র আওয়ামী লীগই তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে ও হৃত অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারে। সে কারণে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হলো, অভিযোগ দায়েরের যথেষ্ট প্রমাণ থাকলেও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ এটাকে তাদের অধিকার হরণের চক্রান্ত হিসেবেই চিহ্নিত করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রদেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। বিক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানিদের দাবির মুখে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন এবং ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবে অভিষিক্ত হন। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থন লাভ করে। এই ঐতিহাসিক নির্বাচনের পর যখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের শাসনক্ষমতা অর্পণে ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়, তখন পূর্ব বাংলার স্বাধীনতাই এদেশের মানুষের একমাত্র অভিপ্রায় হয়ে ওঠে। যার অনিবার্য সমাপ্তি ঘটে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে।

স্বপ্ন পূরণের হিসাব-নিকাশ:
পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার মানুষকে সচেতনকরণে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই ছিল অর্থনীতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়। কিন্তু ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ধ্বংসের ক্ষত পূরণের মধ্য দিয়ে। এই বাস্তবতা সম্বন্ধে দেশের মানুষের সম্যক ধারণা গড়ে না-ওঠাতে দেশের মানুষের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির একটা বিরাট ফারাক দেখা দেয়। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ ও দেশে ব্যাপক শস্যহানির কারণে দেশ একটা দুর্ভিক্ষাবস্তার সম্মুখীন হয়। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের মূল্য হঠাৎ করে বেড়ে যায়। এই দৈবাৎ পরিবর্তনের মোকাবিলায় শাসক দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুত না-থাকাতে এই দলের প্রতি মানুষের আস্থার ঘাটতি দেখা যায়। এই সুযোগে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর সপরিবারে শাহাদাৎবরণ করেন এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশে দীর্ঘ ১৬ বছর সামরিক ও আধা সামরিক শাসনের আওতায় মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী শক্তি দেশের শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে।

নতুন পথের সন্ধানে:
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ক্ষমতার শেষ ভাগে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির আলোকে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ব্রতী হয়েছিল। এই লক্ষ্য অর্জনে বঙ্গবন্ধু একটি জাতীয় প্লাটফর্ম গড়ে তুলেছিলেন, যা ‘বাকশাল’ নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নতুন প্রেক্ষিতে বাকশালের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। বিরূপ ও বিপরীতমুখী পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নতুন যাত্রা শুরু করে। এ সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই দল ছেড়ে চলে যায়। দলের চালিকা মূল শক্তি হয়ে ওঠে যুব ও ছাত্রকর্মীরা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ স্পৃহাই ছিল এসব কর্মীর প্রেরণার উৎস এবং যেহেতু সমাজতন্ত্রমুখী কর্মসূচিই ছিল বঙ্গবন্ধুর শেষ পদক্ষেপ, সেই কারণে এ সময় আওয়ামী লীগ কর্মীরা বাকশালের কর্মসূচিকেই বাস্তবায়নে প্রত্যয়ী হয়। এসবের বাইরে যারা ছিলেন তাদের চিহ্নিত করা হয় প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে। বাকশালপন্থিরা এ সময় দলে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তার করার কারণে ভিন্নমতাবলম্বীরা অনেকেই দল ছেড়ে চলে যান।

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দলীয় সভানেত্রী হিসেবে দেশে ফিরে এলে তাকে অবলম্বন করে দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভার্থীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। শেখ হাসিনা দলে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে ভারসাম্যপূর্ণভাবে দলকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। সেই কারণে কট্টর বাকশালপন্থিরা এ সময় দল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত হয় এবং দলের প্রসার ঘটে। জনগণ আওয়ামী লীগের একক নেতা হিসেবে শেখ হাসিনাকে মেনে নেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার সমাজতন্ত্রমুখী কর্মসূচি থেকে সরে আসতে না-পারাতে দেশের শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, সামরিক-বেসামরিক আমলা ও উদারপন্থিদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। ফলে স্বৈরাচার এরশাদ-বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সিংহভাগ কৃতিত্ব প্রদর্শন করা সত্ত্বেও ’৯১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে ব্যর্থ হয়।

যুগোপযোগী পদক্ষেপ:
’৯১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যর্থতার মূল্যায়নে আওয়ামী লীগ তার পুরনো ধ্যান-ধারণা পরিত্যাগ করে বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করে। সমাজতন্ত্রমুখী অর্থনীতির পরিবর্তে মুক্তবাজার অর্থনীতি, আওয়ামী লীগের মেনোফেস্টোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একইভাবে ধর্মবর্জিত রাজনীতির পরিবর্তে ধর্মকে সম্মান এবং সমাজ-জীবনে ধর্ম অনুশীলনের অধিকারকে আওয়ামী লীগ মেনে নেয়। বৈরী মনোভাবাপন্ন সব মহলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও তাদের আস্থা অর্জনে আওয়ামী লীগ সচেষ্ট হয়। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দ্রুত সফলতা অর্জন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইসিভুক্ত দেশ, চীন, জাপান ও সৌদি আরবের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপনে শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হন এবং একাধিকবার এসব দেশ সফর করেন। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত হিসেবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ শক্তিশালীকরণ ও জনগণের ভোট প্রদানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার কর্মসূচি সব মহলে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। ফলশ্রুতিতে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ১৯৯৬-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর দেশের শাসনভার লাভ করে।

১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে এক প্রবন্ধে আমি লিখেছিলাম-

নতুন দিনের নেত্রী:
বাংলাদেশের গত ৫০ বছরের রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যখন যে দল বা গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে তখন তারা সুবিধাভোগী শ্রেণি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারা অনুযায়ী রাজনীতিকে একটি দীর্ঘমেয়াদি পেশা হিসেবে ধরে নেয়া যায়। প্রাচীন যুগে রাজা-বাদশারা বিনা পয়সার সৈন্যসামন্ত জোগাড় করে রাজ্যজয়ে বের হতো, কোনো যুদ্ধে জয়লাভ করলে সেই রাজ্যের সকল ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করে তা দিয়ে সৈন্যসামন্তের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হতো। আর এর আগের সময়টা পার করত লুটতরাজ করে। আমাদের দেশের রাজনীতি-সংস্কৃতিও এই ছকে বাঁধা পড়েছিল। কিন্তু আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো সেই পুরনো ধাঁচ থেকে বের হয়ে আসতে চেষ্টা করছেন। শোষক নয়, সেবক- এই নীতিতে বিশ্বাসী আজকের আওয়ামী লীগ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নের পরিবর্তে দেশ ও সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। সেই কারণে রাষ্ট্রীয় জীবনে অনেক ইতিবাচক ফলাফল অর্জিত হচ্ছে এবং সকল স্তরে অবকাঠামো ও গুণগত পরিবর্তন সূচিত হওয়াতে একটি আধুনিক কল্যাণকামী রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দৃষ্ট হয়।

একুশ শতকের স্বপ্ন:
আজকের বিশ্ব দ্রুততালয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে। পুরনো ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাস ভেঙে পড়ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নততর হওয়ার কারণে জ্ঞান ও মেধার দ্রুত আদান-প্রদান ঘটছে। বিশ্বায়নের এই নতুন অধ্যায়ে গতানুগতিক রাজনীতিতেও পরিবর্তনের হাওয়া সূচিত হচ্ছে। সে কারণে মানুষ সেকেলে রাজনীতিতে সমর্থন জোগাতে চায় না। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক সমাজ-ব্যবস্থায় স্লোগানসর্বস্ব রাজনীতি মানুষ মেনে নেবে না। দেশের উন্নয়নে কোন রাজনীতিক দলের কর্মসূচি বাস্তবসম্মত ও ইতিবাচক- আজকের দিনে এটাই প্রাধান্য পাচ্ছে। মিটিং-মিছিলে লোক সমাগম করে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও দলের নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির ধ্যান-ধারণা এখন অচল হয়ে গেছে। মানুষ স্ব-স্ব পেশায় নিয়োজিত থেকে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চায়। সে কারণে ভবিষ্যতে মিছিল-মিটিংয়ে সমবেত হওয়া, পিকেটিং বা ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার কর্মী বা সদস্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। কারণ ভবিষ্যতে মানুষ হয়ে পড়বে নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর ম্যানিফেস্টো ও তাদের আচার-আচরণই হবে সবচেয়ে মুখ্য বিষয়।

একুশ শতকের উপযোগী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন বা প্রত্যয় শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, একই প্রেক্ষিতে দলকে উদ্বুদ্ধ ও পুনর্গঠনের সম্যক প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। তাই আগামী শতকের উপযোগী করে আওয়ামী লীগকে গড়ে তোলা দরকার।’

আওয়ামী লীগের মূল্যায়ন করে তখন আমার মন্তব্য ছিল:-
‘আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে নতুন দিনের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে। মুসলিম লীগ পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলেও যুগোপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ করতে না-পারায় দেশের রাজনীতিতে মুসলিম লীগের প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে। বামপন্থি দলগুলোতে মেধাবী লোকজনের সমাবেশ ঘটলেও জনমুখী কর্মসূচি প্রণয়নে ব্যর্থতার কারণে এরা আজ জনবিচ্ছিন্ন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সব সময় যুগোপযোগী কর্মসূচি নিয়ে গেছে। যখন স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজন তখন স্বায়ত্তশাসনের কথা বলেছে, আবার যখন স্বাধীনতার প্রয়োজন তখন বলেছে স্বাধীনতার কথা। স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তার নীতি ও রণকৌশল বারবার পরিবর্তন করেছে। বঙ্গবন্ধুর বাকশাল ও শেখ হাসিনার মুক্তবাজার অর্থনীতির মধ্যে বৈসাদৃশ্য থাকলেও সাদৃশ্য আছে এক জায়গায়, তা হচ্ছে- দেশ ও জনগণের প্রয়োজনীয়তা। ১৯৭৪ সালের প্রেক্ষাপটে বাকশাল কর্মসূচি যেমন সঠিক ছিল, আজকের প্রয়োজনে মুক্তবাজার অর্থনীতিও সঠিক ধারণা। আগামীদিনের জন্য যে পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে তা গ্রহণ করার মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগের শিরা-উপশিরায় নতুন রক্তকণিকা জন্ম নেবে, রক্ত প্রবাহিত হবে।

৫০ বছরের পথপরিক্রমায় দেখা গেছে, যখনই আওয়ামী লীগ পুরনো ধ্যান-ধারণা আঁকড়ে ধরেছে তখনই আওয়ামী লীগের পশ্চাদমুখ হয়েছে। আবার কর্মসূচির পুনর্বিন্যাসে আওয়ামী গতিশীল হয়েছে এবং ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্র ও জনগণের নেতৃত্ব ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আওয়ামী লীগ বেঁচে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। সুবর্ণজয়ন্তীর পথ বেয়ে হীরকজয়ন্তীর আগামীদিনে আওয়ামী লীগ চিরযুবা হয়ে বেঁচে থাক দেশের প্রয়োজনে, জনগণের প্রয়োজন- এ প্রত্যাশা সারা দেশবাসীর ও দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের।’

ফের ছন্দপতন:
আন্তর্জাতিক মোড়লদের ষড়যন্ত্র ও তাদের দেশীয় অনুগামীদের হীন প্রচেষ্টায় ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে স্থূল কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পরাজিত করে দেশে শাসনভার যুথবদ্ধভাবে দখল করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রত্যক্ষ দোসর যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগের নব্যরূপ বিএনপি। ক্ষমতা গ্রহণের প্রাক্কালে প্রশাসনের নগ্ন ছত্রছায়ায় সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের জান-মাল ও ইজ্জতের ওপর হামলে পড়ে জামায়াত-বিএনপি জোট দস্যুরা। দেশে সৃষ্টি করা হয় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির উন্মেষ ঘটে সরকারি নীল নকশায়। এদেশে যাতে আর কখনোই প্রগতিশীল শক্তি জেগে উঠতে না পারে সেজন্য ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করা হয়। সবশেষে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গণমানুষের নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হত্যা করতে চালানো হয় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা।

আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২১ নেতাকর্মী এই বর্বরতায় শাহাদাৎবরণ করেন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের ক্ষত নিয়ে আহত হয়ে বেছে যান আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী। জাতির এই দুঃসময়ে ভয়কে জয় করে শেখ হাসিনা জনগণকে সংগঠিত করে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তীব্র গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপি-জামাত জোট দস্যুদের পতন ঘটে। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় বিশাল জয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে।

সোনার বাংলা বিনির্মাণ:
আমার প্রবন্ধের ‘নতুন দিনের নেত্রী’, ‘একুশ শতকের স্বপ্ন’ ও ‘তখনকার মূল্যায়ন’ অধ্যায় আশ্চর্যভাবে মিলে যায় ২০০৮ সালে ঘোষিত শেখ হাসিনার দিনবদলের সনদে। এই সনদ এখন বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির চাবিকাঠি। জনমানুষের নেতা শেখ হাসিনা বিগত আট বছর ধরে তার প্রজ্ঞাচিত নেতৃত্বে বাংলাদেশকে পরিণত করেছেন মধ্যম আয়ের দেশে। তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা ২০৪১ : সালে উন্নত বাংলাদেশ- এ কথাকে দেশবাসী এখন আর অলীক স্বপ্ন মনে করে না। ২০৪১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিণত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সত্যিকারের সোনার বাংলায়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন করেছি। আর শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব এবং পরিকল্পনা ও নীতি বাস্তবায়নে বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশ অর্জন করবে অর্থনৈতিক মুক্তি।
দেশ ও জাতির প্রয়োজনে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ও যুগ থেকে যুগান্তরে নেতৃত্ব দেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার মেধা, শ্রম ও প্রজ্ঞাচিত্ত নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

আওয়ামী লীগ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে : আসাদুল হক

আপডেট টাইম : ০৭:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০১৬

স্বপেন সূচনা:
১৯০৫ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে বঙ্গ প্রদেশ ভাগ করে পূর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করা হলে ভারতের পশ্চাৎপদ এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আশা-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। এ সময় কলকাতা-কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী ও হিন্দু রাজনৈতিক নেতারা একে ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র বলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন, এই মতের পক্ষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত অবস্থান নেন। ফলে ঢাকা-কেন্দ্রিক নতুন প্রদেশের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে ভারতকে ধর্মভিত্তিক দুই রাষ্ট্র সৃষ্টির আন্দোলনের ফলে ভারতীয় অধিকাংশ রাজনীতিকবৃন্দ হিন্দু ও মুসলমানে বিভাজিত হয়ে যান। ফলে ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। দেশ বিভাগের কূটচালে সবচেয়ে বঞ্চিত হয় পূর্ব বাংলার মানুষ। সমৃদ্ধশালী কলকাতা ভাগ করে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে দেয়ার বিষয়টি নির্দিষ্ট হলেও, পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের নেতাদের উদাসিনতার কারণে কলকাতাও ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসু অবিভক্ত বাংলা নিয়ে সংযুক্ত বাংলা প্রজাতন্ত্রের দাবি তুললে, কায়েমি স্বার্থবাদীরা এই প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয়। ভগ্ন হৃদয়ে মুসলিম লীগের প্রগতিশীল ছাত্র-যুব নেতারা ঢাকায় ফিরে আসেন। পূর্ব বাংলা তখন একটি বৃহৎ গ্রাম ছাড়া আর কোনো অর্থনৈতিক সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব ছিল না। এই আশা ভঙ্গের ক্ষোভকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে পূর্ব বাংলার মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির প্রত্যয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ।

পরিবর্তনের নতুন ধারা:
সাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে আধুনিক যুগের সাথে তাল মেলানো সম্ভব নয়, এ বাস্তবতা দলের প্রথমসারির নেতারা ভালো করেই বুঝতেন। তবে ধর্মের আবেগে যে-দেশের জন্ম হলো, তাতে আঘাত করলে বুমেরাং হতে পারে। এ কারণে আওয়ামী লীগ নামের সাথে মুসলিম শব্দটি রাখা হয়েছিল।’৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলের নেতৃবৃন্দ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। এর ওপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কেন্দ্র ও প্রদেশে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার প্রয়াসে ও সেনাবাহিনী কর্তৃক পাকিস্তানের ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হলে, আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার মানুষকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করার রণকৌশল গ্রহণ করে।

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক নীতি ও এই অঞ্চলের মানুষকে সন্দেহের চোখে দেখার কারণে, আওয়ামী লীগের প্রতি পূর্ব বাংলার মানুষের আগ্রহ দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৬৬ সালে পুনর্গঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬-দফা ঘোষণা করলে পাকিস্তানি শাসকরা আওয়ামী লীগের ওপর দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের ধারণা জন্মে একমাত্র আওয়ামী লীগই তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে ও হৃত অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারে। সে কারণে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হলো, অভিযোগ দায়েরের যথেষ্ট প্রমাণ থাকলেও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ এটাকে তাদের অধিকার হরণের চক্রান্ত হিসেবেই চিহ্নিত করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রদেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। বিক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানিদের দাবির মুখে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন এবং ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবে অভিষিক্ত হন। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থন লাভ করে। এই ঐতিহাসিক নির্বাচনের পর যখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের শাসনক্ষমতা অর্পণে ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়, তখন পূর্ব বাংলার স্বাধীনতাই এদেশের মানুষের একমাত্র অভিপ্রায় হয়ে ওঠে। যার অনিবার্য সমাপ্তি ঘটে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে।

স্বপ্ন পূরণের হিসাব-নিকাশ:
পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার মানুষকে সচেতনকরণে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই ছিল অর্থনীতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়। কিন্তু ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ধ্বংসের ক্ষত পূরণের মধ্য দিয়ে। এই বাস্তবতা সম্বন্ধে দেশের মানুষের সম্যক ধারণা গড়ে না-ওঠাতে দেশের মানুষের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির একটা বিরাট ফারাক দেখা দেয়। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ ও দেশে ব্যাপক শস্যহানির কারণে দেশ একটা দুর্ভিক্ষাবস্তার সম্মুখীন হয়। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের মূল্য হঠাৎ করে বেড়ে যায়। এই দৈবাৎ পরিবর্তনের মোকাবিলায় শাসক দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুত না-থাকাতে এই দলের প্রতি মানুষের আস্থার ঘাটতি দেখা যায়। এই সুযোগে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর সপরিবারে শাহাদাৎবরণ করেন এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশে দীর্ঘ ১৬ বছর সামরিক ও আধা সামরিক শাসনের আওতায় মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী শক্তি দেশের শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে।

নতুন পথের সন্ধানে:
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ক্ষমতার শেষ ভাগে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির আলোকে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ব্রতী হয়েছিল। এই লক্ষ্য অর্জনে বঙ্গবন্ধু একটি জাতীয় প্লাটফর্ম গড়ে তুলেছিলেন, যা ‘বাকশাল’ নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নতুন প্রেক্ষিতে বাকশালের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। বিরূপ ও বিপরীতমুখী পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নতুন যাত্রা শুরু করে। এ সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই দল ছেড়ে চলে যায়। দলের চালিকা মূল শক্তি হয়ে ওঠে যুব ও ছাত্রকর্মীরা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ স্পৃহাই ছিল এসব কর্মীর প্রেরণার উৎস এবং যেহেতু সমাজতন্ত্রমুখী কর্মসূচিই ছিল বঙ্গবন্ধুর শেষ পদক্ষেপ, সেই কারণে এ সময় আওয়ামী লীগ কর্মীরা বাকশালের কর্মসূচিকেই বাস্তবায়নে প্রত্যয়ী হয়। এসবের বাইরে যারা ছিলেন তাদের চিহ্নিত করা হয় প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে। বাকশালপন্থিরা এ সময় দলে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তার করার কারণে ভিন্নমতাবলম্বীরা অনেকেই দল ছেড়ে চলে যান।

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দলীয় সভানেত্রী হিসেবে দেশে ফিরে এলে তাকে অবলম্বন করে দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভার্থীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। শেখ হাসিনা দলে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে ভারসাম্যপূর্ণভাবে দলকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। সেই কারণে কট্টর বাকশালপন্থিরা এ সময় দল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত হয় এবং দলের প্রসার ঘটে। জনগণ আওয়ামী লীগের একক নেতা হিসেবে শেখ হাসিনাকে মেনে নেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার সমাজতন্ত্রমুখী কর্মসূচি থেকে সরে আসতে না-পারাতে দেশের শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, সামরিক-বেসামরিক আমলা ও উদারপন্থিদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। ফলে স্বৈরাচার এরশাদ-বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সিংহভাগ কৃতিত্ব প্রদর্শন করা সত্ত্বেও ’৯১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে ব্যর্থ হয়।

যুগোপযোগী পদক্ষেপ:
’৯১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যর্থতার মূল্যায়নে আওয়ামী লীগ তার পুরনো ধ্যান-ধারণা পরিত্যাগ করে বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করে। সমাজতন্ত্রমুখী অর্থনীতির পরিবর্তে মুক্তবাজার অর্থনীতি, আওয়ামী লীগের মেনোফেস্টোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একইভাবে ধর্মবর্জিত রাজনীতির পরিবর্তে ধর্মকে সম্মান এবং সমাজ-জীবনে ধর্ম অনুশীলনের অধিকারকে আওয়ামী লীগ মেনে নেয়। বৈরী মনোভাবাপন্ন সব মহলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও তাদের আস্থা অর্জনে আওয়ামী লীগ সচেষ্ট হয়। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দ্রুত সফলতা অর্জন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইসিভুক্ত দেশ, চীন, জাপান ও সৌদি আরবের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপনে শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হন এবং একাধিকবার এসব দেশ সফর করেন। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত হিসেবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ শক্তিশালীকরণ ও জনগণের ভোট প্রদানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার কর্মসূচি সব মহলে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। ফলশ্রুতিতে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ১৯৯৬-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর দেশের শাসনভার লাভ করে।

১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে এক প্রবন্ধে আমি লিখেছিলাম-

নতুন দিনের নেত্রী:
বাংলাদেশের গত ৫০ বছরের রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যখন যে দল বা গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে তখন তারা সুবিধাভোগী শ্রেণি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারা অনুযায়ী রাজনীতিকে একটি দীর্ঘমেয়াদি পেশা হিসেবে ধরে নেয়া যায়। প্রাচীন যুগে রাজা-বাদশারা বিনা পয়সার সৈন্যসামন্ত জোগাড় করে রাজ্যজয়ে বের হতো, কোনো যুদ্ধে জয়লাভ করলে সেই রাজ্যের সকল ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করে তা দিয়ে সৈন্যসামন্তের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হতো। আর এর আগের সময়টা পার করত লুটতরাজ করে। আমাদের দেশের রাজনীতি-সংস্কৃতিও এই ছকে বাঁধা পড়েছিল। কিন্তু আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো সেই পুরনো ধাঁচ থেকে বের হয়ে আসতে চেষ্টা করছেন। শোষক নয়, সেবক- এই নীতিতে বিশ্বাসী আজকের আওয়ামী লীগ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নের পরিবর্তে দেশ ও সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। সেই কারণে রাষ্ট্রীয় জীবনে অনেক ইতিবাচক ফলাফল অর্জিত হচ্ছে এবং সকল স্তরে অবকাঠামো ও গুণগত পরিবর্তন সূচিত হওয়াতে একটি আধুনিক কল্যাণকামী রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দৃষ্ট হয়।

একুশ শতকের স্বপ্ন:
আজকের বিশ্ব দ্রুততালয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে। পুরনো ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাস ভেঙে পড়ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নততর হওয়ার কারণে জ্ঞান ও মেধার দ্রুত আদান-প্রদান ঘটছে। বিশ্বায়নের এই নতুন অধ্যায়ে গতানুগতিক রাজনীতিতেও পরিবর্তনের হাওয়া সূচিত হচ্ছে। সে কারণে মানুষ সেকেলে রাজনীতিতে সমর্থন জোগাতে চায় না। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক সমাজ-ব্যবস্থায় স্লোগানসর্বস্ব রাজনীতি মানুষ মেনে নেবে না। দেশের উন্নয়নে কোন রাজনীতিক দলের কর্মসূচি বাস্তবসম্মত ও ইতিবাচক- আজকের দিনে এটাই প্রাধান্য পাচ্ছে। মিটিং-মিছিলে লোক সমাগম করে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও দলের নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির ধ্যান-ধারণা এখন অচল হয়ে গেছে। মানুষ স্ব-স্ব পেশায় নিয়োজিত থেকে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চায়। সে কারণে ভবিষ্যতে মিছিল-মিটিংয়ে সমবেত হওয়া, পিকেটিং বা ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার কর্মী বা সদস্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। কারণ ভবিষ্যতে মানুষ হয়ে পড়বে নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর ম্যানিফেস্টো ও তাদের আচার-আচরণই হবে সবচেয়ে মুখ্য বিষয়।

একুশ শতকের উপযোগী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন বা প্রত্যয় শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, একই প্রেক্ষিতে দলকে উদ্বুদ্ধ ও পুনর্গঠনের সম্যক প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। তাই আগামী শতকের উপযোগী করে আওয়ামী লীগকে গড়ে তোলা দরকার।’

আওয়ামী লীগের মূল্যায়ন করে তখন আমার মন্তব্য ছিল:-
‘আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে নতুন দিনের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে। মুসলিম লীগ পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলেও যুগোপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ করতে না-পারায় দেশের রাজনীতিতে মুসলিম লীগের প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে। বামপন্থি দলগুলোতে মেধাবী লোকজনের সমাবেশ ঘটলেও জনমুখী কর্মসূচি প্রণয়নে ব্যর্থতার কারণে এরা আজ জনবিচ্ছিন্ন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সব সময় যুগোপযোগী কর্মসূচি নিয়ে গেছে। যখন স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজন তখন স্বায়ত্তশাসনের কথা বলেছে, আবার যখন স্বাধীনতার প্রয়োজন তখন বলেছে স্বাধীনতার কথা। স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তার নীতি ও রণকৌশল বারবার পরিবর্তন করেছে। বঙ্গবন্ধুর বাকশাল ও শেখ হাসিনার মুক্তবাজার অর্থনীতির মধ্যে বৈসাদৃশ্য থাকলেও সাদৃশ্য আছে এক জায়গায়, তা হচ্ছে- দেশ ও জনগণের প্রয়োজনীয়তা। ১৯৭৪ সালের প্রেক্ষাপটে বাকশাল কর্মসূচি যেমন সঠিক ছিল, আজকের প্রয়োজনে মুক্তবাজার অর্থনীতিও সঠিক ধারণা। আগামীদিনের জন্য যে পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে তা গ্রহণ করার মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগের শিরা-উপশিরায় নতুন রক্তকণিকা জন্ম নেবে, রক্ত প্রবাহিত হবে।

৫০ বছরের পথপরিক্রমায় দেখা গেছে, যখনই আওয়ামী লীগ পুরনো ধ্যান-ধারণা আঁকড়ে ধরেছে তখনই আওয়ামী লীগের পশ্চাদমুখ হয়েছে। আবার কর্মসূচির পুনর্বিন্যাসে আওয়ামী গতিশীল হয়েছে এবং ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্র ও জনগণের নেতৃত্ব ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আওয়ামী লীগ বেঁচে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। সুবর্ণজয়ন্তীর পথ বেয়ে হীরকজয়ন্তীর আগামীদিনে আওয়ামী লীগ চিরযুবা হয়ে বেঁচে থাক দেশের প্রয়োজনে, জনগণের প্রয়োজন- এ প্রত্যাশা সারা দেশবাসীর ও দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের।’

ফের ছন্দপতন:
আন্তর্জাতিক মোড়লদের ষড়যন্ত্র ও তাদের দেশীয় অনুগামীদের হীন প্রচেষ্টায় ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে স্থূল কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পরাজিত করে দেশে শাসনভার যুথবদ্ধভাবে দখল করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রত্যক্ষ দোসর যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগের নব্যরূপ বিএনপি। ক্ষমতা গ্রহণের প্রাক্কালে প্রশাসনের নগ্ন ছত্রছায়ায় সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের জান-মাল ও ইজ্জতের ওপর হামলে পড়ে জামায়াত-বিএনপি জোট দস্যুরা। দেশে সৃষ্টি করা হয় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির উন্মেষ ঘটে সরকারি নীল নকশায়। এদেশে যাতে আর কখনোই প্রগতিশীল শক্তি জেগে উঠতে না পারে সেজন্য ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করা হয়। সবশেষে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গণমানুষের নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হত্যা করতে চালানো হয় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা।

আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২১ নেতাকর্মী এই বর্বরতায় শাহাদাৎবরণ করেন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের ক্ষত নিয়ে আহত হয়ে বেছে যান আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী। জাতির এই দুঃসময়ে ভয়কে জয় করে শেখ হাসিনা জনগণকে সংগঠিত করে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তীব্র গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপি-জামাত জোট দস্যুদের পতন ঘটে। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় বিশাল জয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে।

সোনার বাংলা বিনির্মাণ:
আমার প্রবন্ধের ‘নতুন দিনের নেত্রী’, ‘একুশ শতকের স্বপ্ন’ ও ‘তখনকার মূল্যায়ন’ অধ্যায় আশ্চর্যভাবে মিলে যায় ২০০৮ সালে ঘোষিত শেখ হাসিনার দিনবদলের সনদে। এই সনদ এখন বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির চাবিকাঠি। জনমানুষের নেতা শেখ হাসিনা বিগত আট বছর ধরে তার প্রজ্ঞাচিত নেতৃত্বে বাংলাদেশকে পরিণত করেছেন মধ্যম আয়ের দেশে। তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা ২০৪১ : সালে উন্নত বাংলাদেশ- এ কথাকে দেশবাসী এখন আর অলীক স্বপ্ন মনে করে না। ২০৪১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিণত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সত্যিকারের সোনার বাংলায়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন করেছি। আর শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব এবং পরিকল্পনা ও নীতি বাস্তবায়নে বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশ অর্জন করবে অর্থনৈতিক মুক্তি।
দেশ ও জাতির প্রয়োজনে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ও যুগ থেকে যুগান্তরে নেতৃত্ব দেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার মেধা, শ্রম ও প্রজ্ঞাচিত্ত নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।