ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতীয় সংসদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র বছরখানেক বাকি। রাজনৈতিক দলগুলো এর মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

দল গোছানোর কাজকর্মও শুরু হয়ে গেছে। জোটভুক্ত দলগুলো নিজ দলের আসন নিয়ে দর-কষাকষি শুরু করেছে। অন্যদিকে প্রধান প্রতিপক্ষ দুই দলের বিরোধ-বিতর্ক ক্রমেই তুঙ্গে উঠছে। এরই মধ্যে নির্বাচনী হাওয়া ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। দেশের মানুষও নির্বাচন নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে। নির্বাচনের আগের বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে নানা ধরনের আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেকে।

নাগরিক-পেশাজীবী নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে তাঁদের প্রত্যাশা ও পরামর্শ তুলে ধরা হচ্ছে। এসবের ভেতর দিয়ে সাধারণ মানুষের যে প্রত্যাশাটি বড় হয়ে উঠেছে তা হলো, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক। দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা অস্থিতিশীলতা তৈরি না হোক। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদানের সুযোগ থাকুক।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল অংশ নেয়নি; বরং তারা সেই নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। ফলে দেশব্যাপী সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীবাহী বাস-ট্রেনে আগুন দেওয়া, রেললাইন উপড়ে ফেলা, সড়কে গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা, সরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়া—কী করা হয়নি তখন! নির্বাচনের দিনও সংঘাত চলে।

ভোটকেন্দ্রে আসার পথে ভোটারদের ওপর হামলা, ভোটকেন্দ্র তথা বিদ্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া, এমনকি পোলিং-প্রিসাইডিং অফিসারদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ মানুষ তেমন দৃশ্য আর দেখতে চায় না। বিএনপি এবারও নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক অথবা নির্দলীয় সরকারের দাবি করে আসছে। ভোটের সময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাইছে। এ ছাড়া বেশ কিছু দাবি করেছে। এসব দাবি মানা না হলে তারা নির্বাচনে যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

তাহলে দেশ কি আবার সেই সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাবে? সরকারি দলের কোনো কোনো নেতা বলছেন, তেমন পরিস্থিতি হলে কঠোরভাবে তা দমন করা হবে। কিন্তু বিএনপির সব দাবিকে অবজ্ঞা করা হলে সেই পরিস্থিতির সৃষ্টির জন্য তাঁরাও কি দায়ী হবেন না? বিএনপির দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করতে অসুবিধা কোথায়? যে দাবিগুলো যৌক্তিক সেগুলো মেনে নেওয়াই কি উত্তম নয়? গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একগুঁয়েমির কোনো স্থান নেই। অন্যদিকে দাবি না মানার অজুহাতে সহিংসতাও কাম্য নয়।

নিয়মতান্ত্রিক পথেই আন্দোলন চালাতে হবে। উভয় পক্ষকে জনপ্রত্যাশা বিবেচনায় নিতে হবে। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে, ২০১৪ সালের মতোই বিএনপিসহ আরো অনেক দল যদি নির্বাচনে না আসে সে নির্বাচন কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে রাজনীতিতে গণতন্ত্রের চর্চা বাড়াতে হবে। দেশে সুস্থ রাজনীতি থাকতে হবে। অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া সুস্থ রাজনীতি থাকতে পারে না। আমরা আশা করি, উভয় পক্ষ গণতান্ত্রিক সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে আগামী নির্বাচনকে অর্থবহ করবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জাতীয় সংসদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ

আপডেট টাইম : ০৬:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র বছরখানেক বাকি। রাজনৈতিক দলগুলো এর মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

দল গোছানোর কাজকর্মও শুরু হয়ে গেছে। জোটভুক্ত দলগুলো নিজ দলের আসন নিয়ে দর-কষাকষি শুরু করেছে। অন্যদিকে প্রধান প্রতিপক্ষ দুই দলের বিরোধ-বিতর্ক ক্রমেই তুঙ্গে উঠছে। এরই মধ্যে নির্বাচনী হাওয়া ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। দেশের মানুষও নির্বাচন নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে। নির্বাচনের আগের বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে নানা ধরনের আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেকে।

নাগরিক-পেশাজীবী নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে তাঁদের প্রত্যাশা ও পরামর্শ তুলে ধরা হচ্ছে। এসবের ভেতর দিয়ে সাধারণ মানুষের যে প্রত্যাশাটি বড় হয়ে উঠেছে তা হলো, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক। দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা অস্থিতিশীলতা তৈরি না হোক। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদানের সুযোগ থাকুক।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল অংশ নেয়নি; বরং তারা সেই নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। ফলে দেশব্যাপী সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীবাহী বাস-ট্রেনে আগুন দেওয়া, রেললাইন উপড়ে ফেলা, সড়কে গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা, সরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়া—কী করা হয়নি তখন! নির্বাচনের দিনও সংঘাত চলে।

ভোটকেন্দ্রে আসার পথে ভোটারদের ওপর হামলা, ভোটকেন্দ্র তথা বিদ্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া, এমনকি পোলিং-প্রিসাইডিং অফিসারদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ মানুষ তেমন দৃশ্য আর দেখতে চায় না। বিএনপি এবারও নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক অথবা নির্দলীয় সরকারের দাবি করে আসছে। ভোটের সময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাইছে। এ ছাড়া বেশ কিছু দাবি করেছে। এসব দাবি মানা না হলে তারা নির্বাচনে যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

তাহলে দেশ কি আবার সেই সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাবে? সরকারি দলের কোনো কোনো নেতা বলছেন, তেমন পরিস্থিতি হলে কঠোরভাবে তা দমন করা হবে। কিন্তু বিএনপির সব দাবিকে অবজ্ঞা করা হলে সেই পরিস্থিতির সৃষ্টির জন্য তাঁরাও কি দায়ী হবেন না? বিএনপির দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করতে অসুবিধা কোথায়? যে দাবিগুলো যৌক্তিক সেগুলো মেনে নেওয়াই কি উত্তম নয়? গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একগুঁয়েমির কোনো স্থান নেই। অন্যদিকে দাবি না মানার অজুহাতে সহিংসতাও কাম্য নয়।

নিয়মতান্ত্রিক পথেই আন্দোলন চালাতে হবে। উভয় পক্ষকে জনপ্রত্যাশা বিবেচনায় নিতে হবে। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে, ২০১৪ সালের মতোই বিএনপিসহ আরো অনেক দল যদি নির্বাচনে না আসে সে নির্বাচন কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে রাজনীতিতে গণতন্ত্রের চর্চা বাড়াতে হবে। দেশে সুস্থ রাজনীতি থাকতে হবে। অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া সুস্থ রাজনীতি থাকতে পারে না। আমরা আশা করি, উভয় পক্ষ গণতান্ত্রিক সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে আগামী নির্বাচনকে অর্থবহ করবে।