ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তৈরি পোশাক শিল্পে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে: বিশ্বব্যাংক

উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে আরও বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

সোমবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘স্টিচেস টু রিসেচ: এ্যাপারেল এমপ্লয়মেন্ট, ট্রেড এন্ড ইকোনমিক ডেভলপমেন্ট’শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক উৎপাদন এক শতাংশ বাড়লে দেশে শূণ্য দশমিক ৩ থেকে ৪ শতাংশ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তৈরি করা চীনা পোশাকের দাম ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায় ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সম্মেলন কক্ষে বিশ্বব্যাংক ও বিআইডিএস যৌথভাবে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।

অন্যান্যের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান, বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. কে এম মূর্শিদ, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান প্রমূখ আলোচনায় অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট গ্লাডিস লোপেজ একিভিডো মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

ড. মসিউর রহমান বলেন, কেবল নিম্ন মজুরির ওপর নির্ভরশীল হয়ে তৈরি পোশাক খাত টেকসই করা ঠিক হবে না। নিন্ম মজুরি হলো সাময়িক সুবিধা। ২ থেকে ৩ বছর পর বিশ্ববাজারে টিকতে হলে অন্যান্য বিষয়গুলোও ভাবতে হবে। দক্ষ শ্রম শক্তি তৈরির দিকে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার দক্ষ শ্রম শক্তির অভাব পূরণে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরিসহ বড় ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারের পাশাপাশি তিনি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকারের প্রচেষ্টা আছে, বেসরকারি উদ্যোগ জোরদার হলে এই দক্ষ শ্রম শক্তির অভাব পূরণ হবে।

তিনি তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সহজীকরণসহ বন্ড সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে মত প্রকাশ করেন।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে তৈরি পোশাকের দাম এক শতাংশ বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রের (ইউএসএ) বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাতের রফতানি বাড়ানোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে নীতি কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও অধিকার নিশ্চিত এবং রফতানি বাজার বহুমূখীকরণ করতে হবে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে তিনটি বিষয়ের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলো হলো শ্রমিক ও মধ্যবর্তী ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা উন্নয়ন, কারখানার অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সামাজিক ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক কার্যালয়ের প্রধান চিমিয়াও ফান বলেন, বিশ্ব পোশাক বাজারে চীনের অংশগ্রহণ হ্রাস বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বৃদ্ধির বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে গুণগত মানের পণ্য সরবরাহ এবং কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নত করতে হবে।

ড. মুস্তাফিজুর রহমান কারখানার নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরী বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, পণ্যের মূল্য বাড়লে তার কত শতাংশ শ্রমিক পাবেন তা ঠিক করা জরুরী। শ্রমমূল্যের সাথে উৎপাদনশীলতা সরাসরি জড়িত।

ড. কে এম মুর্শিদ বলেন, পোশাক খাতে শ্রমিক অধিকার এবং বেতন বৈষম্য নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। নিরাপত্তা এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

তৈরি পোশাক শিল্পে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে: বিশ্বব্যাংক

আপডেট টাইম : ০৫:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ মে ২০১৬

উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে আরও বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

সোমবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘স্টিচেস টু রিসেচ: এ্যাপারেল এমপ্লয়মেন্ট, ট্রেড এন্ড ইকোনমিক ডেভলপমেন্ট’শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক উৎপাদন এক শতাংশ বাড়লে দেশে শূণ্য দশমিক ৩ থেকে ৪ শতাংশ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তৈরি করা চীনা পোশাকের দাম ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায় ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সম্মেলন কক্ষে বিশ্বব্যাংক ও বিআইডিএস যৌথভাবে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।

অন্যান্যের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান, বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. কে এম মূর্শিদ, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান প্রমূখ আলোচনায় অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট গ্লাডিস লোপেজ একিভিডো মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

ড. মসিউর রহমান বলেন, কেবল নিম্ন মজুরির ওপর নির্ভরশীল হয়ে তৈরি পোশাক খাত টেকসই করা ঠিক হবে না। নিন্ম মজুরি হলো সাময়িক সুবিধা। ২ থেকে ৩ বছর পর বিশ্ববাজারে টিকতে হলে অন্যান্য বিষয়গুলোও ভাবতে হবে। দক্ষ শ্রম শক্তি তৈরির দিকে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার দক্ষ শ্রম শক্তির অভাব পূরণে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরিসহ বড় ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারের পাশাপাশি তিনি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকারের প্রচেষ্টা আছে, বেসরকারি উদ্যোগ জোরদার হলে এই দক্ষ শ্রম শক্তির অভাব পূরণ হবে।

তিনি তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সহজীকরণসহ বন্ড সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে মত প্রকাশ করেন।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে তৈরি পোশাকের দাম এক শতাংশ বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রের (ইউএসএ) বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাতের রফতানি বাড়ানোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে নীতি কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও অধিকার নিশ্চিত এবং রফতানি বাজার বহুমূখীকরণ করতে হবে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে তিনটি বিষয়ের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলো হলো শ্রমিক ও মধ্যবর্তী ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা উন্নয়ন, কারখানার অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সামাজিক ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক কার্যালয়ের প্রধান চিমিয়াও ফান বলেন, বিশ্ব পোশাক বাজারে চীনের অংশগ্রহণ হ্রাস বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বৃদ্ধির বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে গুণগত মানের পণ্য সরবরাহ এবং কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নত করতে হবে।

ড. মুস্তাফিজুর রহমান কারখানার নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরী বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, পণ্যের মূল্য বাড়লে তার কত শতাংশ শ্রমিক পাবেন তা ঠিক করা জরুরী। শ্রমমূল্যের সাথে উৎপাদনশীলতা সরাসরি জড়িত।

ড. কে এম মুর্শিদ বলেন, পোশাক খাতে শ্রমিক অধিকার এবং বেতন বৈষম্য নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। নিরাপত্তা এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ।