কোনো ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে জবরদখলমূলকভাবে কারো সম্পদ গ্রাস করার এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। অন্যের সম্পদে অবৈধ হস্তক্ষেপের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)
কখনো কখনো দেখা যায়, আদালত কিংবা আইনের প্যাঁচে ফেলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি গ্রাস করার পাঁয়তারা করা হয়।
অন্যের সম্পদ কমবেশি, দামি-কম দামি—সর্বাবস্থায় মালিকের অনুমতি ছাড়া কারো জন্য ব্যবহার করা বৈধ নয়। আনাস ইবনে মালেক (রা.) নবীজি থেকে বর্ণনা করেন, ‘খুশি মনে দেওয়া ছাড়া কোনো মুসলমানের সম্পদ হালাল হবে না কাউকে কোনো কিছু বিক্রি করতে বাধ্য করা।
অন্যের জমি জবরদখল করা ঘৃণিত অপরাধ। দেখা যায়, ক্ষমতার জোরে মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাঁই বসতভিটা থেকেও উচ্ছেদ করা হয়। অনেকে ভাই-বোনের জমি আত্মসাৎ করে। চাচা-জ্যাঠা এতিম ভাতিজা-ভাতিজির জমি নিজ কবজায় নিয়ে নেন। ইসলামের চোখে এসব চরম অন্যায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায্যভাবে এক বিঘত জমিও আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন সেই জমিসহ সপ্ত জমিনের নিচে তাকে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৫৪)
শাসক কর্তৃক জনগণের অধিকার নষ্ট করার শাস্তি
শাসকগোষ্ঠী কখনো কখনো অন্যের অধিকার হরণ করার মতো ঘৃণ্য কাজ করে। অথচ বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে লোক সকল! নিশ্চয়ই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা এক। এবং তোমাদের পিতাও এক। তোমরা সকলেই আদম থেকে আর আদম মাটি থেকে। আল্লাহর কাছে সে-ই সম্মানিত যে বেশি মুত্তাকি। তাকওয়া ছাড়া আরবদের অনারবদের ওপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।’ (হুকুকুল ইনসান ফিল ইসলাম : ৮)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক শাসককে তার শাসিত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২০০)
শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় নবীজির নির্দেশ
অধুনিক এই দুনিয়ায়ও শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত হতে দেখা যায়। কল-কারখানার শ্রমিক থেকে বাসাবাড়ির কাজের লোক, সর্বত্রই এরা অধিকার বঞ্চিত। শক্তিশালী কর্তৃক দুর্বলদের প্রতি জুলুম এক নির্মম বাস্তবতা। নবীজি শ্রমিকের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন। শ্রমের ন্যায্য মূল্য দিতে আদেশ করেছেন। ‘শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ১১৯৮৮)
ভাই কর্তৃক বোনের অধিকারে হস্তক্ষেপ
কিছু মানুষ এত নিচু ও ইতর শ্রেণির, যারা বাটপারি ও চাতুরতায় নিজ বোনকেও রেহাই দেয় না। বোনকে অধিকার বঞ্চিত করতে এরা কুণ্ঠিত ও শঙ্কিত হয় না। শরিয়ত প্রদত্ত ন্যায্য অধিকার থেকে তারা বোনদের মাহরুম রাখে। এর মাধ্যমে তারা দুটি অপরাধে সংঘটিত হয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। আর নবীজি বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৫৬)
স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে অধিকার বঞ্চিত করা
স্ত্রী স্বামীর অর্ধাঙ্গী। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কিছু অধিকার রয়েছে। স্বামীর কর্তব্য সেগুলো পূরণ করা। স্ত্রীকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না করা। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার আছে, তেমনি স্ত্রীদেরও স্বামীদের ওপর ন্যায়সংগত অধিকার আছে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২২৮)
নবীজি বিদায় হজের ভাষণে বলেছিলেন, ‘নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা তোমরা তাদের আল্লাহর আমানতস্বরূপ গ্রহণ করেছ। আর আল্লাহর নামেই তাদের নিজেদের জন্য বৈধ করেছ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১৬৩)
প্রতিবেশীর অধিকারে হস্তক্ষেপ করা
ইসলাম প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছে। প্রত্যেক মুসলিমের উচিত প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি খেয়াল রাখা। কোনোভাবে যেন তাদের অধিকার খর্ব না হয়—সেটা নিশ্চিত করা। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে জ্বালাতন না করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)